বর্তমান সরকারের প্রথম বাজেট উপলক্ষে জাতীয় সংসদ এলাকা ছিল নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। তবে উৎসবের কোনো কমতি ছিল না। সংসদের বিভিন্ন ফ্লোরে ফুল ও বাহারি পাতাবাহার গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছিল। ঘষামাজা করা হয়েছিল সংসদের দেয়াল। রঙ করা হয়েছিল সব দরজায়।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় দেশের ৪৮তম বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শুধু অধিবেশনই নয়, দেশের ইতিহাসে বৃহত্তম এ বাজেট উপস্থাপন প্রত্যক্ষ করতে ভিভিআইপি, ভিআইপি, দর্শক গ্যালারি সবকিছু ছিল পরিপূর্ণ। ছিলেন বিএনপির এমপিরাও।
এবারই প্রথমবারের মতো বাজেট পেশের আগে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐহিত্য, মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। প্রামাণ্য চিত্রে ফুটে ওঠে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির সোপানও।
এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিন্তু তার অসুস্থতার কারণে হাল ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বাজেটের সংক্ষিপ্তসার পাঠ করেন। এর আগে সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন পাওয়ার পর বাজেট বিলে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।
উৎসবমুখর সংসদে বাজেট বক্তৃতা শুনতে আসেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সংসদে নিজ কক্ষে বসে বাজেট উপস্থাপন প্রত্যক্ষ করেন তিনি। পরে তিনি বিদেশের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করেন। এর আগে রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভবনে স্বাগত জানান সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছাড়াও প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল, কূটনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাজেট বক্তৃতা প্রত্যক্ষ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কালো স্যুটকেস হাতে বিকেল পৌনে ৩টায় বাজেট অধিবেশনে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী। অসুস্থতার মধ্যেও অর্থমন্ত্রী হাসপাতাল থেকে সরাসরি সংসদ ভবনে আসেন। তারপরও তার মুখে ছিল উচ্ছ্বাস। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে দলের সিনিয়র মন্ত্রী ও নেতারা অর্থমন্ত্রীক সহযোগিতা করেন। বিশেষ করে সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেন।
তবে অসুস্থতার কারণে বক্তব্য শেষ করতে না পারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশিষ্ট বক্তব্য পাঠ করেন। এর মাধ্যমে দেশের সংসদীয় ইতিহাসে একটি অনন্য নজির সৃষ্টি করেন তিনি। বিকেল ৪টা ১০ থেকে ৪টা ৪০ পর্যন্ত আধা ঘণ্টাব্যাপী অবশিষ্ট বাজেট বক্তব্য শেষ করলে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা দীর্ঘক্ষণ টেবিল চাপড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।
বাজেট উপস্থাপনের জন্য ফ্লোর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অর্থমন্ত্রী খুবই অসুস্থ। তার চোখে অপারারেশন হয়েছে, ১৫ মিনিট পর পর তার চোখে ড্রপ দিতে হয়। আমারও চোখে অপারেশন হয়েছে, ঠান্ডা লেগে কথা বলতে গেলে কাশি আসে। এটাই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। তারপরও আপনি (স্পিকার) অনুমতি দিলে বাজেটের বাকিটা আমি উপস্থাপন করব।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপন শুরু করলে টেবিল চাপড়িয়ে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়।
তবে বাজেট বক্তৃতার বইয়ের অনেকাংশেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে কিছু বক্তব্য ছিল। সেটি পাঠ করার সময় প্রধানমন্ত্রী হেসে স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, এটি আমার বক্তব্য নয়, এটি হচ্ছে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য। বাজেট বক্তৃতায় যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে সেটি আমি পড়ব কি না?’
জবাবে স্পিকার বাজেট বক্তৃতায় যেভাবে রয়েছে সেভাবেই উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
অর্থ বিল উত্থাপন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাজেট বক্তৃতা শেষ হলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিজে দাঁড়িয়ে অর্থবিল- ২০১৯ সংসদে উত্থাপন করেন। সরকারের আর্থিক প্রস্তাবাবলী কার্যকরণ এবং কতিপয় আইন সংশোধনের লক্ষ্যে বিলটি উত্থাপন করা হয়। তবে এ বিল উত্থাপানের বিরোধিতা করেন বিরোধী দলীয় এমপি ফখরুল ইমাম। কিন্তু তার বিরোধিতা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
জানা গেছে, বিলটি আগামী ৩০ জুন পাস হবে। এর আগে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সরকার ও বিরোধী দলীয় সদস্য ৪৫ ঘণ্টা আলোচনা করবেন।