৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা সম্ভাব্য আকার ধরে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ হচ্ছে আজ। একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে আজ এই বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এটি দেশের ৪৮তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২০তম এবং অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট। অবশ্য গত সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে অনেক বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তিনি।
‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামের এবারের বাজেট হবে ‘স্মার্ট’ বাজেট। এবারের বাজেটের আকার বাড়লেও অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা হবে সংক্ষিপ্ত। তবে এ বক্তৃতার একটি বর্ধিত সংস্করণ বাজেট বই আকারে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
বাজেটের লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী হলেও তা অর্জন করতে চেষ্টা হবে সাধ্যের মধ্যে। আর এর মধ্যেই থাকবে দেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার। শুধু এক বছরের জন্য নয়, সূদুরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে বিশেষ করে ২০৪১ সালকে টার্গেট করে তৈরি হয়েছে এবারের বাজেট।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে আগামী বাজেট ১২ দশমিক ৬১ শতাংশ ও সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৮ দশমিক ২২ শতাংশ বড়। আগামী ৩০ জুন এই বাজেট পাস হবে।
এবারের বাজেটে ভ্যাট আইন কার্যকর ও বেকারদের জন্য ঋণ তহবিল গঠনসহ বেশ কিছু নতুন বিষয় থাকতে পারে। ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব করা হতে পারে ব্যাংকিংখাত, পুঁজিবাজার, সঞ্চয়পত্রসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে। ঘোষণা থাকতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্তির।
দেশের জনগণের ওপর নতুন কোন করচাপ তৈরি করতে চান না অর্থমন্ত্রী। এজন্য তিনি এবারের বাজেটে করজাল সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেবেন, যাতে করহার না বাড়িয়ে অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ করা যায়।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবারের বাজেটের করহারের বিষয়ে একাধিকবার বলেছেন, করের হার বাড়িয়ে কোনো ধরনের করচাপ তৈরি হোক, এটা তিনি চান না। বরং করজাল সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়াতে চান।
বেকারদের জন্য এবারের বাজেটে প্রথমবারের মত ‘উদ্যোক্তা তহবিল’ গঠন করা হচ্ছে। এই তহবিল গঠনের উদ্দেশ্য হলো নতুন উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এছাড়া রপ্তানি বহুমুখীকরণের লক্ষে আগামী বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ থাকতে পারে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে বাসস’র প্রতিবেদনে বলা হয়, তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে যেভাবে প্রনোদনা পেয়ে আসছে, আরও কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রনোদনা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অন্যদিকে, পুঁজিবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ ঋণ ব্যবস্থার প্রস্তাব থাকবে এবারের বাজেটে।
প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আহরণের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, এনবিআর-বহির্ভূত কর ১৪ হাজার ৫০০ কোটি,কর ব্যতীত প্রাপ্তি ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি এবং বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ ধরা হচ্ছে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটের পরিচালন ব্যয় ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।
আসন্ন বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপ ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এবার আকর্ষণীয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করা হবে। বাজেট বক্তৃতার বর্ধিত সংস্করণ, মূল বাজেট বক্তৃতাসহ অন্যান্য সকল ডকুমেন্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ জাতীয় সংসদ হতে সরবরাহ করা হবে।
বাজেটকে আরও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইট http://www.mof.gov.bd -এ বাজেটের সব তথ্যাদি ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাঠ ও ডাউনলোড করতে পারবে এবং দেশ বা বিদেশ থেকে উক্ত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফিডব্যাক ফরম পূরণ করে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ প্রেরণ করা যাবে।
প্রাপ্ত সকল মতামত ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে। জাতীয় সংসদ কর্তৃক বাজেট অনুমোদনের সময়ে ও পরে তা কার্যকর করা হবে। ব্যাপকভিত্তিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে www.bangladesh. gov.bd, www.nbr-bd.org, www.plancomm.gov.bd, www.imed.gov.bd, www.bdpressinform.portal.gov.bd, www.pmo.gov.bd ওয়েবসাইট লিংক এর ঠিকানায় বাজেট সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে।
বাজেট উপস্থাপনের পরদিন অর্থাৎ ১৪ জুন শুক্রবার বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতি সম্মেলন কেন্দ্রের কার্নিভাল হলে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।