চিকিৎসক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতালগুলোতে তিন দিন ধরে চলা ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা।
রাজ্যের নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (এনআরএস) সোমবার রাতে জুনিয়র চিকিৎসকদের মারধরের প্রতিবাদে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালের আউটডোরে ধর্মঘটের ডাক দেয় চিকিৎসকদের সংগঠন।
তারপর থেকে রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চলছে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি। কর্মবিরতির এক পর্যায়ে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে যোগ দেন সিনিয়র চিকিৎসকরাও।
বুধবার জরুরি বিভাগেও চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়নি। এ নিয়ে এনআরএস থেকে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও।
এনআরএস-কাণ্ডের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে বর্ধমানে শুরু হয় জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি। সন্ধ্যায় জরুরি বিভাগেরও গেট আটকে সেখানে বিক্ষোভ হয়। রাতে এক রোগী জুনিয়র ডাক্তারদের বাধায় জরুরি বিভাগে ঢুকতে পারেনি, এই অভিযোগ থেকে বর্ধমান মেডিক্যালে অস্থিরতা শুরু হয়। সেখান থেকে ঢিল ছোড়াছুড়ি। ঢিলের আঘাতে তিন জুনিয়র ডাক্তার আহত হন।
পাশেই পুলিশ ক্যাম্প থাকা সত্ত্বেও কেন হামলার ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন চিকিৎসকরা। পুলিশের অভিযোগ, ওই সময় পুলিশ ও চিকিৎসকদের মধ্যে হাতাহাতিতে এক কনস্টেবল আহত হন। পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি তখনকার মতো শান্ত হয়।
তবে ডাক্তারদের অভিযোগ, কনস্টেবল আক্রান্ত হওয়ার ‘ক্ষোভে’ ওই ক্যাম্প থেকে পুলিশ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) প্রিয়ব্রত রায় অবশ্য বলেছেন, অভিযোগটি পুরোপুরি ঠিক নয়। ডিএসপি, আইসিরা হাসপাতালেই ছিলেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ জুনিয়র ডাক্তাররা আবার জরুরি বিভাগের পাশে অবস্থান শুরু করেন। বন্ধ করে দেয়া হয় হাসপাতালের সব দরজা। এর মধ্যে মঙ্গলকোটের এক রোগী হাসপাতালে ঢুকতে গেলে তাকে বাধা দেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগকে কেন্দ্র করে আবারও বাঁধে সংঘর্ষ।
ওই সময় আরও তিন জুনিয়র ডাক্তার জখম হন বলে দাবি করেছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। ডেন্টাল কলেজের ছাত্র শুভজিৎ মিদ্দাকেও হাসপাতালের গেটের বাইরে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
তারপরই জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশকে বাঁশ, লাঠি ও ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে ছুটতে দেখা যায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বুধবার তারা হাসপাতাল লাগোয়া অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ইউনিয়ন অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছেন।
অন্যদিকে জুনিয়র ডাক্তারদের পাল্টা অভিযোগ, অ্যাম্বুলেন্স চালকদের মদদে বহিরাগতরা বাইরে থেকে ঢিল, ইট-পাটকেল ছুড়েছে।
এরপর খোদ পুলিশ সুপারকেই লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, তাকে চেম্বারে আটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভও দেখানো হয়।
- আরও পড়ুন, শান্তিতে ৯ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ
বুধবার দুপুর দু’টো নাগাদ বৈঠক শুরু হয়। পরে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ থেকে ছাত্রনেতা সৌরভ দেব অভিযোগ করেন, তাদের সাত জন আহত হয়েছে। এর প্রতিবাদে কর্মবিরতি চলবে। ‘এনআরএস থেকে কর্মবিরতি উঠলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
পুলিশ জানিয়েছে, কোনো ঘটনারই নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে তিন-চার জনকে আটক করা হয়েছে।
এ অবস্থায় রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবন চিকিৎসকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে বিবৃতি দেয়। তবে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন না তারা।