বাজেট : নতুন কৌশলে আদায় হবে সম্পদশালীর রাজস্ব

মত ও পথ রিপোর্ট

বাজেট
ফাইল ছবি

সম্পদ কর আইন কার্যকর না থাকায় বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকা বিত্তশালীরা তেমন কোনো আয় প্রদর্শন করেন না। এবার বিত্তশালীদের কাছ থেকে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যে নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রস্তাবিত বাজেটে সারচার্জ আদায়ে নতুন কৌশল নেয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে সম্পদ কর আইন কার্যকর নেই। সম্পদ করের পরিবর্তে ব্যক্তিশ্রেণির বিত্তশালী করদাতারা তাদের প্রদেয় আয়করের একটি নির্দিষ্ট হারে সারচার্জ দিয়ে থাকেন। বিগত কয়েক বছর ধরে এ বিধান কার্যকর আছে।

‘আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, অনেক বিত্তশালী করদাতার বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। কিন্তু তারা তেমন কোনো আয় প্রদর্শন করেন না। ফলে প্রদেয় আয়কর কম হওয়ায় তাদের তেমন কোনো সারচার্জও প্রদান করতে হয় না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ৫০ কোটি বা তার অধিক নিট সম্পদ রয়েছে এমন করদাতাদের নিট সম্পদের ওপর দশমিক ১ শতাংশ অথবা প্রদেয় করের ৩০ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি সে পরিমাণ সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করছি।’

সারচার্জের এ কৌশলের পাশাপাশি সারচার্জ আরোপের নিম্নসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার ওপর নিট সম্পদ থাকলে সারচার্জ প্রদান করতে হয়। সারচার্জ আরোপের এ নিম্নসীমা বৃদ্ধি করে তিন কোটি টাকায় নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।

এদিকে নিট পরিসম্পদের মূল্যমান তিন কোটি টাকা অতিক্রম করলে ন্যূনতম সারচার্জের পরিমাণ তিন হাজার টাকা এবং ১০ কোটি টাকা অতিক্রম করলে ন্যূনতম সারচার্জের পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকা প্রদানের বিধানটি অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে।

একই সঙ্গে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারি করদাতার উক্ত ব্যবসায় হতে অর্জিত আয়ের ওপর বিদ্যমান ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সারচার্জও বিগত বছরের ন্যায় অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন হয়। এটি দেশের ৪৮তম এবং বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয় পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি।

বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। বরাবরের মতো বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম বাজেট। যদিও গত সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে অনেক বাজেট প্রণয়নে পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তিনি।

শুরুতে দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা শুরু করলেও পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী নিজ আসনে বসে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। কিন্তু বিকেল ৪টার পর অসুস্থ অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন সম্ভবপর না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বাকি অংশ সংসদে উপস্থাপন করেন।

বেলা ৪টা ৪১ মিনিটে ‘প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে উপস্থাপিত হলো’ মর্মে ঘোষণা দেন স্পিকার।

প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর।

এর আগে মন্ত্রিসভা ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের অনুমোদন দেয়। বাজেট ঘোষণার আগে দুপুর ১টার একটু পর জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ বৈঠকে মন্ত্রিসভা এ অনুমোদন দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছর মূল বাজেটের আকার দাঁড়ায় চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, রাজস্ব আদায় করতে না পারা এবং উন্নয়ন প্রকল্পে পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ খরচ করতে না পারায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয় চার লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী বাজেটের আকার সংশোধিত বাজেট থেকে ৮০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা বেশি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে