বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট সবচেয়ে বড় অঙ্কের বাজেট। এরই মধ্যে বাজেট নিয়ে নানা মহল থেকে প্রতিক্রিয়াও এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির যে পরিধি, তার সঙ্গে তুলনা করলে বাজেটের আকার বড় কিংবা উচ্চাভিলাষী নয়, বরং তুলনামূলক ছোট। বাজেটের আকার আরো বড় হওয়া উচিত।
জাতীয় সংসদে দীর্ঘ আলোচনার পর বাজেট পাস হওয়ার পরও প্রশ্ন থেকে যায় বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে। রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্পের সংখ্যাও অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু প্রতিবছরই বছরের মাঝামাঝি গিয়ে বাজেট কাটছাঁট করতে হয়। যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির কথা বাজেটে উল্লেখ করা থাকে, তা বাস্তবায়িত হয় না শুধু সক্ষমতার অভাবে। প্রশ্ন হচ্ছে বাজেট বাস্তবায়ন যদি না হয়, তাহলে বড় আকারের বাজেট ঘোষণা করে লাভ কী? আমরা আশা করবো- বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষমতার প্রশ্নে সরকার সফলতার পরিচয় দেবে।
প্রতিবছরের মতো এবারো বাজেটের আগে আয়কর নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে দুশ্চিন্তা ছিল। সবার প্রত্যাশা ছিল করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হবে। কিন্তু তা বাড়ানো হয়নি। অথচ এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। সেদিক বিবেচনায় বছর শেষে কর হিসেবে চার-পাঁচ হাজার টাকা এনবিআরের কোষাগারে জমা দিতে হিমশিম খাবে—এটাই স্বাভাবিক।
দেশে বর্তমানে ইটিআইএনধারীর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। এসব ব্যক্তির মধ্যে রিটার্ন দাখিল করে মাত্র ২১-২২ লাখ। এদের মধ্যে নিয়মিত কর দিচ্ছে গড়ে মাত্র ১৫ লাখ। দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে তিন লাখ টাকার মধ্যে আয় থাকা কর দেওয়া ব্যক্তির সংখ্যা এক লাখ ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ। এসব ব্যক্তির কাছ থেকে এনবিআর আদায় করে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা।
অতীতে নজর দিলে দেখা যাবে, রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে প্রশাসনিক দক্ষতা, এনবিআরের সংস্কারের কথা বাজেটে বলা হলেও তা বাস্তবায়িত হয় না। রাজস্ব আদায়ে পুরোপুরি অটোমেশন, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নতুন নতুন করের আওতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়ানো, কর ফাঁকি রোধে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। আশা করব এসব বিষয়ে সরকার নজর দেবে।
অন্যদিকে নতুন ভ্যাট আইন পাস হওয়ার পর থেকে গত কয়েক বছর এটি বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যাপক তোড়জোড় দেখানো হলেও প্রস্তুতি শেষ করতে পারেনি এনবিআর। নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের দ্বিধা কাটেনি। অজানা আশঙ্কা রয়েছে ভোক্তাদের মনেও। এর প্রয়োগ নিয়ে জটিলতার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন বিশ্লেষকরাও।
আমরা আশা করব, বাজেটে দেওয়া প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষমতার পরিচয় দেবে সরকার।