বাংলাদেশসহ শ্রীলংকা ও মালদ্বীপে চীনের প্রভাব কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বাংলাদেশসহ শ্রীলংকা ও মালদ্বীপে চীনের প্রভাব কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডিপার্টমেন্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এলাইস জি ওয়েলস। ছবি : ইন্টারনেট

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ শ্রীলংকা ও মালদ্বীপে চীনের প্রভাব ঠেকাতে উদ্যোগী হয়েছে।

খবরে প্রকাশ, এ জন্য সমুদ্র অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ তিনটি দেশের সেনাবাহিনীকে অর্থায়ন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন কংগ্রেসের কাছে তিন কোটি ডলার বরাদ্দ চেয়েছে।

একই সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনকে দমাতে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, তাকে সমর্থন দিতে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াশিংটনের ক্যাপিটাল হিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিসভার পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে ২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের শুনানিতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডিপার্টমেন্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এলাইস জি ওয়েলস এ তথ্য জানান।

ইতিমধ্যে বঙ্গোপসাগরে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও যোগাযোগ বাড়াতে ছয় কোটি ৪০ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

ওয়েলস বলেন, ডিপার্টমেন্টের নতুন নিরাপত্তাবিষয়ক সহযোগিতা প্রকল্পে সাহায্য করার জন্য আমরা কংগ্রেসকে অনুরোধ করেছি। বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপের সমুদ্র অঞ্চলে নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত ৩ কোটি ডলার প্রয়োজন।

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ এবং বাজেট ২০২০ বিষয়ে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সাবকমিটিতে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে এ অঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ডিজিটাল যোগাযোগ ও সাইবার নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ছয় কোটি ৪০ লাখ ডলার বরাদ্দ চেয়েছি।

সম্প্রতি বাংলাদেশসহ শ্রীলংকা ও মালদ্বীপে চীনের ব্যাপক প্রভাব ও ক্রমশ জেঁকে বসাকে প্রতিহত করতেই আলোচিত এ প্রকল্প ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

ওয়েলস বলেন, আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোকে চীনের ফাঁদে ফেলতে দিতে পারি না। একই সঙ্গে ডিপার্টমেন্ট ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনকে দমাতে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তাকে সমর্থন দিতে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

ওয়েলস জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন এ অঞ্চলে বাংলাদেশকে সব থেকে বেশি সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের বাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখানে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ বাস করে এবং জাতীয় জিডিপি সব সময় ৬ শতাংশের বেশি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন এবং নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক বিরোধীদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চর্চার পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। প্রত্যেক বৈঠকেই আমরা এ ব্যাপারে কথা বলেছি।

তিনি ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসাও করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইউএসএআইডির মাধ্যমে ২০১৭ সালের পর থেকে রোহিঙ্গাদের প্রায় ৪৫১ মিলিয়ন ডলার সাহায্য করেছে।

বাংলাদেশে ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফেরাতে’ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসূচি প্রস্তাব

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিসভার পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে ২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের শুনানিতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠায় কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ কর্মসূচির জন্য যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের কাছে তহবিল চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক দফতর ইউএসএআইডি।

দফতটির এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রশাসক গ্লোরিয়া এ তহবিল অনুমোদন চান।

গ্লোরিয়া স্টিল বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্টের ইন্দো-প্যাসিফিক পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ইউএসএআইডির ‘স্বনির্ভরতার পথে যাত্রাকে’ এগিয়ে নিতে সংস্থাটি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী কার ওপর জোর দিচ্ছে। ২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জন্য কংগ্রেসের কাছে যে বাজেট অনুরোধ করা হয়েছে তার মধ্যে সুশাসন খাতে ব্যয়ের জন্য ৫০ লাখ মার্কিন ডলারও অন্তর্ভুক্ত।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়সহ সবার জন্য বিচার পাওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি, গণতন্ত্র, সুশাসন ও আইনের শাসন উৎসাহিত করতে প্রকল্পের মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক ট্রান্সপারেন্সি ইনিশিয়েটিভকে এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

গ্লোরিয়া স্টিল বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও রাজনীতিতে বহুত্ববাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা কর্মসূচিগুলো গণতাতান্ত্রিক উন্নয়ন, পেশাদারি ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহযোগিতাকে উৎসাহিত করবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে