অভিযান পরিচালনার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর অনেক সময় পুলিশ না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে আনসার সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালায়। কর্মকর্তারা এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। তাই পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করতে সীমিত আকারে হলেও ‘পরিবেশ পুলিশ’ চায় অধিদপ্তর।
অভিযান পরিচালনা অধিকতর জোরদার করতে সরকারের কাছে ‘পরিবেশ পুলিশ’ বরাদ্দ চেয়েছে সংস্থাটি। কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযান পরিচালনার জন্য দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকলেও অনেক সময় পুলিশ রিক্যুইজিশন চেয়ে না পাওয়ায় অভিযানে বিঘ্ন ঘটে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও অভিযান পরিচালনা করতে পারে না পরিবেশ অধিদপ্তর।
আজ শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর আয়োজিত ‘এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমে গণমাধ্যমের সহযোগিতা বিষয়ক কর্মশালায়’ এ দাবি জানান তারা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহাম্মদসহ অধিদপ্তরের অন্য কর্মকর্তারা সবাই তাদের বক্তব্যে একই ধরনের দাবি জানান সরকারের কাছে। আলাদা পুলিশ না হলেও সার্বক্ষণিক অধিদপ্তরের জন্য অন্তত এক প্লাটুন পুলিশ বরাদ্দ করার কথা বলেছেন তারা।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) রুবিনা ফেরদৌসি বলেন, মহাপরিচালকের অর্পিত ক্ষমতার আলোকে ২০১০ সালের ১৩ জুলাই পরিবেশ অধিদপ্তর ক্ষতিপূরণ ধার্য ও আদায় শুরু করে। সেই থেকে অদ্যাবধি পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতিসাধনের অপরাধে পাঁচ হাজার ৪৫ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২৮৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। আদায় হয় ১৭৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে ৭৭৫ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে ১৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জুলাই ২০১৮ থেকে এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৪৯৯টি ইটভাটার বিরুদ্ধে সাত কোটি ৬৬ লাখ টাকা আদায়ের পাশাপাশি ১৬৯ কোটি টন পলিথিন জব্দ ও পাহাড় কাটার অপরাধে ৩২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্প্রতি অভিযান পরিচালনা শুরু করে একই অপরাধে ২৮টি ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করা হয়।
এদিকে কর্মশালায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহাম্মদ জানান, ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিবেশ উন্নয়নে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে দূষণের ব্যাপারে দুই দফায় লিখিত নোটিশ দেয়া হলেও কর্ণপাত করছে না সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, সামনে বর্ষা মৌসুম। এ মৌসুমে আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের বর্জ্য পানিতে মিশে নদী দূষণ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে ল্যান্ডফিলটি পরিবেশসম্মত করার ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তা কামনা করছি। আপনাদের কাছে অনুরোধ আমিনবাজারের বর্জ্যের কারণে পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে- এ নিয়ে বেশি বেশি প্রতিবেদন প্রচার করুন।
রফিক আহাম্মদ বলেন, পরিবেশের উন্নয়নের জন্য আর্থিক জরিমানা সমাধান নয়। গণসচেতনতা গড়ে তুলতে পারলে অর্থাৎ সবাই পরিবেশ সচেতন হলে পরিবেশের উন্নয়ন হবে। এরপরও যদি কেউ আইন ভঙ্গ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা যেতে পারে।