বিচারের জন্য বাসিন্দাদের চীনের মূলভূখণ্ডে পাঠানোর সুযোগ রেখে করা বহিঃসমর্পণ বিলটি ‘আপাতত তুলে রাখা হচ্ছে’ বলে জানিয়েছেন হংকংয়ের শীর্ষ নির্বাহী ক্যারি লাম।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বিল সংক্রান্ত সব কার্যক্রম স্থগিত করার কথা নিশ্চিত করেছেন।
লামের সংবাদ সম্মেলনের আগে তার এক উপদেষ্টা ও হংকংয়ের বেইজিংপন্থি বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক বিলটি নিয়ে আইন পরিষদে আলোচনা ও ভোটাভুটি ‘কিছু সময়ের জন্য’ স্থগিত রাখার পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়েছিলেন।
বেইজিংপন্থিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় আইন পরিষদে উত্থাপিত হলে বিলটি সহজেই পাস হতো বলে অনুমান করা হচ্ছিল।
‘কাজের ঘাটতি ও অন্যান্য বিষয়, যা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে তার জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত,’ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ক্যারি লাম।
বিলটির ব্যাখ্যা ও জনগণকে বোঝাতে তার সরকারের কাজ ‘যথেষ্ট’ ছিল না বলেও স্বীকার করে নেন এ নারী।
তিনি বলেন, হংকংয়ের বৃহত্তর স্বার্থ নিশ্চিত করাই আমার লক্ষ্য, যার মধ্যে প্রথম কাজই হচ্ছে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফেরানো।
লাম বলেন, জুলাইয়ের আগে বিলটি পাসের যে চেষ্টা ছিল, ‘সম্ভবত তা এখন আর বিদ্যমান নেই।
‘বিলটি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের কোনো তারিখও ঠিক করা হয়নি,’ বলেছেন এ শীর্ষ নির্বাহী।
প্রস্তাবিত ওই বিলে তাইওয়ান, ম্যাকাউ বা চীনের মূলভূখণ্ডে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হংকংয়ের বাসিন্দাদের আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সেসব স্থানে বহিঃসমর্পণের সুযোগ রাখা হয়েছিল।
একে ব্যবহার করে চীন হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি রাজনীতিকদের ওপর দমনপীড়ন চালাতে পারে বলে আশঙ্কা সমালোচকদের।
বেইজিংপন্থি রাজনীতিকদের মতে, বহিঃসমর্পণের সুযোগ না থাকায় হংকং চীনের অন্যান্য অংশের অপরাধীদের স্বর্গে পরিণত হয়েছে।
মানবাধিকার লংঘন যেন না হয়, সেজন্য প্রতিটি মামলা ধরে ধরে হংকংয়ের আদালতই বহিঃসমর্পণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে- ‘রক্ষাকবচ’ হিসেবে বিলে এ বিধান যুক্ত আছে বলেও জানিয়েছে তারা।
বিরোধীদের আশঙ্কা, বিলটি পাস হলে হংকংয়ের বেইজিংবিরোধী হিসেবে পরিচিতরা কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রণাধীন চীনের বিচারব্যবস্থার জালে আটকা পড়বেন।
গত সপ্তাহের রোববার শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, ধর্মীয় সংগঠনের সদস্য, শিক্ষকসহ লাখো বাসিন্দা বিলটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে হংকংজুড়ে বিক্ষোভ দেখায়।
মঙ্গলবার আইন পরিষদের বাইরে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীরা সংঘর্ষেও জড়ায়। বিক্ষোভকারীদের সরাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়তে হয়।
লাম সেসময় বিলটি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়তা দেখালেও পরে জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলে পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছে হংকংয়ের সংবাদমাধ্যম আইকেবল, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট ও সিং টাও।
১৯৯৭ সালে ব্রিটিশদের থেকে চীনের কাছে হস্তান্তরের পর হংকংয়ের ইতিহাসে গত সপ্তাহের ওই প্রতিবাদই সবচেয়ে বড় ছিল বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
চীনের কাছে হস্তান্তরের সময় যুক্তরাজ্য শহরটির স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা অটুট রাখার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছিল।
হংকংয়ের কারণেই চীনকে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থাপনার’ নীতিতে চলতে হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যকে প্রতিশ্রুতি দিলেও নিজেদের ভূখণ্ডভুক্ত হওয়ার পর থেকেই বেইজিং হংকংয়ের গণতান্ত্রিক সংস্কারে বাধা, স্থানীয় নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ও বিরোধীদের ওপর তুমুল দমন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ সমালোচকদের।
চীন শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
হংকংয়ের গত সপ্তাহের বিক্ষোভ ও সহিংসতায় ‘বিদেশি শক্তির ইন্ধন’ও দেখছে চীনের গণমাধ্যমগুলো।
তারা বলেছে, বহিঃসমর্পণ বিল নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে বিদেশি শক্তি চীনের ক্ষতি করতে চাইছে।