ফরিদপুরে গত দুই বছর ধরে চাষ হচ্ছে বারোমাসি হলুদ ও লাল তরমুজ, যা খেতে বেশ সুস্বাদু। গত বছর স্বল্প পরিসরে এই ভিন্নধর্মী দুই ধরনের তরমুজ চাষ করে বাজার মূল্য ভালো পাওয়ায় চাষ বেড়ে এবার দ্বিগুণ হয়েছে। তবে এই তরমুজে কৃষকেরা বেশি লাভবান হওয়ায় সামনের বছরগুলোতে তরমুজের চাষ আরও বেশি হবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। এদিকে ভিন্নধর্মী এই তরমুজ চাষে জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
জানা যায়, জেলার সদরপুর, ভাঙ্গা, বোয়ালমারী, মধুখালী, সাতৈর, কাটাখালী, শৈলডুবি, মজুমদার বাজার ও যাত্রাবাড়ীসহ বেশ কিছু এলাকায় বিগত বছর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বারোমাসি হলুদ ও লাল তরমুজ চাষ শুরু করা হয়। এই তরমুজের দাম ভালো পাওয়ায় তা চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। বিশেষ করে এই দুই ধরনের তরমুজ কৃষকরা বিষমুক্তভাবে চাষ করছেন।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কার্ত্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, হলুদ তরমুজ (কার্নিয়া) ও লাল তরমুজ (সুইট ব্লাক-২) মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে চাষ করে ফলন পাওয়া যায়। এরমধ্যে হলুদ তরমুজ মাটিতে ও লাল তরমুজ মাচা (ব্যালচিং পদ্ধিতি) ও মাটিতে চাষ করা যায়।
- আরও পড়ুন>> ওয়াসার পানিতে পোকামাকড়!
তিনি আরও জানান, তেমন কোনো পরিশ্রম না থাকায় খুব সহজে এই তরমুজ চাষ এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে কী পরিমাণ জমিতে এই তরমুজ চাষ হয়েছে এর কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারেনি কৃষি বিভাগ।
কাটাখালী এলাকার হলুদ তরমুজ চাষি লিটন ফকির বলেন, আমি প্রথম এ এলাকায় হলুদ তরমুজের চাষ শুরু করি। তরমুজ চাষ করে আমার সফলতা দেখে এখানকার অন্য কৃষকরা এ চাষ শুরু করেন। আমিও তাদেরকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছি, বীজ থেকে পরিচর্যা কীভাবে করতে হয়।
ভাঙ্গার সাদিপুর এলাকার কৃষক শেখ জুয়েল জানান, আমি ১০ শতাংশ জমিতে তাপসদার কথা মতো পরীক্ষা মূলকভাবে সুইট ব্লাক-২ বারোমাসি কালো তরমুজ চাষ শুরু করি। এর আগেও অনেক ফসল চাষ করেছি কিন্তু এতো লাভজনক কোনো ফসল পায়নি। তিনি জানান, আমার খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকার মতো। আশা করছি ভাল লাভের মুখ দেখতে পাবো।
এদিকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যাপারীরা এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখান থেকে ট্রাকে করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে সুস্বাদু হলুদ তরমুজ (কার্নিয়া) ও লাল তরমুজ (সুইট ব্লাক-২)।
ঢাকা থেকে আসা ব্যাপারী সুমন মাতুব্বর বলেন, দেশের বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যে কারেন যে দামই হোক আমরা এ তরমুজ কিনতে আসি এই বাজারে। তিনি বলেন দাম বেশি হলেই এর পার্থক্য সবার থেকে আলাদা করেছে বাজারে।
দত্ত সীডের মালিক তাপস দত্ত জানান, থাইলান্ড থেকে এ বীজ সংগ্রহ করেছেন তিনি। গত বছর কয়েকজন কৃষককে এই জাতের বীজ দেয়া হয়। এরপর এর সুফল দেখতে পেয়ে অন্য কৃষকরা এবার এ ধরনের তরমুজের চাষ শুরু করেছেন।
বীষমুক্ত হলুদ তরমুজ (কার্নিয়া) ও লাল তরমুজ (সুইট ব্লাক-২) চাষে সরকারের সকল ধরনের সহযোগিতা পেলে সারা বছর দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও এই তরমুজ রপ্তানি করতে পারবে বলে কৃষকের প্রত্যাশা।