অবশেষে ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেপ্তার

মত ও পথ রিপোর্ট

ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন
ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ছবি : সংগৃহিত

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা ও অপরাধীদের সাথে সংশ্লিষ্টতার দায়ে অবশেষে ফেনীর সোনাগাজী থানার আলোচিত সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর আজ রবিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া) সোহেল রানা সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, গত ১৭ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এরপর থেকেই পলাতক ছিলেন সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম।

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার কয়েক দিন আগে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে থানায় এলে তাকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে এবং তা ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ওসি মোয়াজ্জেম।

এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক। গত ১০ এপ্রিল সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয় মোয়াজ্জেম হোসেনকে। পরে গত ১২ মে তিনি রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে যোগদান করেন।

২৭ মে আদালতের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ওই দিনই সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসলাম জগলুল হোসেন ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির দুই দিন পরে আদালতে জামিন আবেদনও করেছিলেন। তবে তখন থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন।

পিবিআইয়ের তদন্তে থেকে জানা যায়, গত ৬ এপ্রিল সকালে শাহাদত হোসেন শামীম, নুর উদ্দিন ও হাফেজ আব্দুল কাদের মাদ্রাসায় আসে এবং পরিকল্পনা মতো যার যার অবস্থানে যায়। শাহাদত হোসেন পলিথিনে করে আনা কেরোসিন তেল ও অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে থেকে আনা গ্লাস নিয়ে ছাদের বাথরুমের পাশে রেখে দেয়।

কামরুন্নাহার মনি তিনটি বোরকা ও চার জোড়া হাত মোজা নিয়ে সাইক্লোন সেন্টারের তৃতীয় তলায় রাখে। শাহাদত হোসেন শামীম, জাবেদ ও জোবায়ের সাড়ে ৯টার দিকে বোরকা ও হাত-মোজা পরিধান করে সেখানে অবস্থান নেয়।

নুসরাত পরীক্ষা দিতে এলে পরিকল্পনা মতো উম্মে সুলতানা পপি নুসরাতকে তার বান্ধবীকে মারধরের কথা বলে। নুসরাত দৌড়ে ছাদে যেতে থাকে। দ্বিতীয় তলায় পৌঁছালে পপি নুসরাতকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে বলে ও ভয় দেখায়।

নুসরাত মামলা তুলবে না বলতে বলতে ছাদে উঠলে কামরুন্নাহার মনি, শাহাদত হোসেন শামীম, জোবায়ের ও জাবেদ নুসরাতের পিছনে ছাদে যায়। সেখানে তারা নুসরাতকে একটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বললে নুসরাত অস্বীকৃতি জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শাহাদত হোসেন শামীম বাম হাত দিয়ে নুসরাতের মুখ চেপে ধরে ও পপিকে বলে নুসরাতের বোরকার মধ্য থেকে ওড়না নেওয়ার জন্য।

পপি ওড়না নিয়ে জুবায়েরকে দেয়। জুবায়ের ওড়নার এক অংশ দিয়ে পা বাঁধে ও পপি হাত বাঁধে। এরপর পপি, মনি ও শামীম তাকে শুইয়ে ফেলে। আর জাবেদ কেরোসিন ঢালে নুসরাতের শরীরে। শামীমের ইঙ্গিতে জুবায়ের তার কাছে থাকা দেয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়। শামীম জবানবন্দিতে বলেছে, নুসরাতের মুখ ও পা চেপে ধরায় সে সব স্থানে কেরোসিন দেওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে