পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসক ধর্মঘট ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ভারতজুড়ে। দেশটিতে চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার বেশিরভাগ রাজ্যে বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে হাসপাতালগুলো।
আন্দোলনের ষষ্ঠদিনে রোববার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলোচনার প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা। এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলনরত চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দল বিকেল ৩টায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের আলোচনা শুরুর কারণে বেশ কিছু হাসপাতাল ধর্মঘট কর্মসূচিতে অংশ না-ও নিতে পারে। দিল্লির এআইআইএমএস হাসপাতাল রোববার থেকেই তাদের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
টানা ছয় দিন আন্দোলনের পর সপ্তমদিনে নিজেদের অবস্থান কিছুটা নমনীয় করেছেন পশ্চিমবঙ্গের আন্দোলনরত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার আলোচনার প্রস্তাব দিলেও এতদিন তারা সেটি প্রত্যাখ্যান করে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার চিকিৎসকদের এক মুখপাত্র বলেন, আমরা এ অচলাবস্থার নিরসন চাই। তাই মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দমতো স্থানেই আলোচনা হবে। তবে, তা হতে হবে সংবাদমাধ্যমের সামনে, দরজা বন্ধ করে নয়।
গত শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আলোচনা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ছয় দফা দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। এতে চিকিৎসকের ওপর হামলাকারীর যথাযথ বিচার ও চিকিৎসকদের ‘বহিরাগত’ বলে কটূক্তি করায় মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানো হয়। এদিন, রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলোর প্রায় ৩শ’ চিকিৎসক গণইস্তফা দেন।
এরপর থেকেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে গোটা ভারতজুড়ে। শুক্রবার ধর্মঘটে যোগ দেয় দিল্লি মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। মহারাষ্ট্রের প্রায় সাড়ে চার হাজার চিকিৎসক কর্মস্থলে যাওয়া বন্ধ করে দেন। হায়দ্রাবাদের হাসপাতালগুলোতেও শুরু হয় ধর্মঘট।
চিকিৎসকদের এ ধর্মঘটের শুরু গত সোমবার। ওই দিন কলকাতার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক ব্যক্তি মারা যান। তার মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ এনে হাসপাতালের চিকিৎসকদের মারধর করেন রোগীর স্বজনরা। এতে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক গুরুতর আহত হন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দেন মেডিক্যাল কলেজটির শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা। পরে, তাদের সঙ্গে যোগ দেন কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরাও।
এর মধ্যে, গত বৃহস্পতিবার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের দুপুর ২টার মধ্যে কাজে যোগ দিতে হুঁশিয়ারি দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এসময় শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের ‘বহিরাগত’ বলে কটূক্তি করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে, আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকবার আলোচনার জন্য পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয়ে ডাকলেও তাতে সাড়া দেননি চিকিৎসকরা।