এ ম্যাচ জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে সাকিব আল হাসান। বল হাতে ২ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও খেলেছেন ১২৪ রানের অনবদ্য ইনিংস। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে লিটন অপরাজিত থাকেন ৯৪ রানে।
টনটনের ছোট মাঠে প্রতিপক্ষের ৩২১ রানের সংগ্রহটা ছিল অনুমেয়। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে ভালো করতে হলে, এসব ম্যাচে জিততে হবে দাপট দেখিয়ে। সে কাজটি যেন আজ অক্ষরে-অক্ষরে মিলিয়েই করল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরি ও লিটন কুমার দাসের ফিফটির সঙ্গে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের যোগ্য দুইটি ইনিংসে সহজ জয়ই পেয়েছে টাইগাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ৩২১ রানের সংগ্রহটা মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ৫১ বল হাতে রেখেই টপকে ফেলেছে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জয়ের পর নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের কাছে হারায় সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়েছিলেন মাশরাফি-সাকিবরা। প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল তাদের সামর্থ্য নিয়েই। সেসব সমালোচনার মোক্ষম জবাব দিয়ে রেকর্ড গড়েই ক্যারিবীয়দের হারাল বাংলাদেশ।
ওয়ানডে ক্রিকেটে এতদিন সর্বোচ্চ ৩১৮ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ছিল বাংলাদেশের। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে এসেছিল সে জয়। আজ তারা ছাড়িয়ে গেল সে ম্যাচকে। নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩২১ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড করল টাইগাররা।
এ ম্যাচ জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে সাকিব আল হাসান। বল হাতে ২ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও খেলেছেন ১২৪ রানের অনবদ্য ইনিংস। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে লিটন অপরাজিত থাকেন ৯৪ রানে।
লক্ষ্য ৩২২ রানের। শুরুটা ভালোই হয়েছে বাংলাদেশের। ক্যারিবীয় বোলারদের দেখেশুনে খেলছিলেন দুই ওপেনার সৌম্য সরকার আর তামিম ইকবাল। বিশেষ করে সৌম্য তার সহজাত মারকুটে ব্যাটিংটাই করছিলেন। কিন্তু অতি আগ্রাসনই যেন কাল হলো।
নবম ওভারে আন্দ্রে রাসেলের প্রথম ডেলিভারিতেই পয়েন্টের উপর দিয়ে দারুণ এক ছক্কা হাঁকান সৌম্য। পরের বলে আবার চালিয়ে দেন, স্লিপে ক্যাচ নিয়ে নেন গেইল। ২৩ বলে ২টি করে চার ছক্কায় সৌম্য তখন ২৯ রানে। ৫২ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর ঝড়ো এক জুটি গড়েন তামিম আর সাকিব আল হাসান। সৌম্য আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে ৩৩ বলেই জুটিতে হাফসেঞ্চুরি পার করেন এই যুগল। ৫৫ বলেই গড়ে ফেলেন ৬৯ রানের জুটি।
কিন্তু কপাল মন্দ হলে যা হয়! এবারের বিশ্বকাপে প্রথম তিন ম্যাচে রান পাননি। আজ (রোববার) বেশ দেখেশুনে খেলছিলেন তামিম ইকবাল। হাফসেঞ্চুরির খুব কাছেও চলে গিয়েছিলেন। ৪৮ রানে এসে দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার হন বাঁহাতি এই ওপেনার।
কট্রেলের বলটি ড্রাইভ করে একটুখানি বের হয়ে গিয়েছিলেন তামিম। সুযোগ না দিয়ে তার মুখের উপর দিয়েই থ্রো করে দেন ক্যারিবীয় পেসার। তামিম ব্যাট রাখতে রাখতে ভেঙে যায় স্ট্যাম্প। ৫৩ বলে ৬ বাউন্ডারিতে গড়া টাইগার ওপেনারের ৪৮ রানের ইনিংসটি থামে দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে।
তারপর মুশফিকুর রহীমও বেশিদূর যেতে পারেননি। ওসানে থমাসের বলে মাত্র ১ রান করে উইকেটরক্ষক শাই হোপের ক্যাচ হয়েছেন মিডল অর্ডারের এই ভরসা। মুশফিকের বিদায়ে উড়ে আসে শঙ্কা, জেগে ওঠে ক্যারিবীয়দের ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা।
তবে চতুর্থ উইকেটে সব শঙ্কা উড়িয়ে দেন সাকিব আল হাসান ও লিটন কুমার দাস। ক্যারিবীয় বোলারদের তুলোধুনো করে দুজন মিলে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে বাংলাদেশকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে, গড়েন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে রেকর্ড ১৮৯ রানের জুটি।
দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব আল হাসান, উঠে যান চলতি বিশ্বকাপের রান সংগ্রাহকের তালিকায় সবার শীর্ষে। কম যাননি লিটন কুমার দাসও। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই তুলে নেন ফিফটি।
এর আগে ৮ উইকেটে ৩২১ রানের পাহাড়সমান পুঁজি দাঁড় করায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে অবশ্য শুরুটা তেমন ভালো ছিল না তাদের। বোলিং উদ্বোধন করেন টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রথম ওভারে কোনো রান নিতে পারেননি ক্যারিবীয় দুই ওপেনার ক্রিস গেইল আর এভিন লুইস। মেডেন দেন মাশরাফি।
পরের ওভারে সাইফউদ্দীনও ২ রানের বেশি দেননি। তৃতীয় ওভারে এভিন লুইসের কাছে মাত্র একটি বাউন্ডারি হজম করেন মাশরাফি। তার পরের ওভারে দ্বিতীয় বলেই আঘাত সাইফউদ্দীনের।
অফসাইডে বেরিয়ে যাওয়া বল বুঝতে না পেরে একটু খোঁচা দিয়েছিলেন গেইল। উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহীম ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন। এ নিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে চার ম্যাচে দুবারই শূন্যতে আউট হলেন বিধ্বংসী এই ওপেনার।
৬ রান তুলতেই ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। কিছুটা বিপদেই পড়ে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন এভিন লুইস আর শাই হোপ, দ্বিতীয় উইকেটে তারা যোগ করেন ১১৬ রান। ১৫৯ রানে ৩ উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা।
২৪৩ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে আরেকটি ঝড়ো জুটি ক্যারিবীয়দের। এবার হোপের সঙ্গী অধিনায়ক জেসন হোল্ডার, ১৫ বলে ৩৩ রানের ঝড় তুলে ক্যারিবীয় অধিনায়ক আউট হন সাইফউদ্দীনের বলে, লং অফে ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ।
- মিসরের সাবেক রাষ্ট্রপতি মুরসি আর নেই
- ওসি মোয়াজ্জেমের প্রতি পুলিশের ‘দরদ’, হাতকড়া না পরানোয় ক্ষোভ
- ধর্ষককে ইনজেকশন দিয়ে নপুংসক করা হবে
তারপরও একটা প্রান্ত ধরে ছিলেন শাই হোপ। বল খরচ করলেও যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। শেষ পর্যন্ত আর সেঞ্চুরি পাওয়া হয়ে উঠেনি তার। ১২১ বলে ৯৬ রান করে মোস্তাফিজের শিকার হন হোপ।
বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন দুই পেসার মোস্তাফিজ আর সাইফউদ্দিন। স্পিনার সাকিবের শিকার ২ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ৩২১/৮ (শাই হোপ ৯৬, এভিন লুইস ৭০, হিতমার ৫০, হোল্ডার ৩৩, নিকোলাস ২৫, ড্যারেন ব্রাভো ১৯; মোস্তাফিজ ৩/৫৯, সাইফউদ্দিন ৩/৭২, সাকিব ২/৫৪)।
বাংলাদেশ: ৪১.৩ ওভারে ৩২২/৩ (সাকিব ১২৪, লিটন ৯৪, তামিম ৪৯, সৌম্য ২৯, মুশফিক ১)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।