ছয় বছর আগে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের’ খণ্ডকালীন কর্মী মো. অহিদুজ্জামানকে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে খালাস দিয়ে চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মনির কামাল বুধবার এই রায় ঘোষণা করেন।
মামলার প্রধান আসামি মাদারীপুর সদরের কুকরাইল এলাকার মহিউদ্দিন দর্জিকে রায়ে খালাস দেওয়া হয়। ইতালি প্রবাসী মহিউদ্দিনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার কাজ চলে।
আর কালকিনির লেনিন বেপারী, কুকরাইলের শাহাবুদ্দিন দর্জি, ফয়সাল আমেদ এবং রেজাউল বেপারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
সেই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ২ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।
যাবজ্জীবনের চার আসামির মধ্যে রেজাউল পলাতক, বাকিরা কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৮ মার্চ মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থানা এলাকার কাশিমপুর চরদিঘলিয়ার শাহপাড়া গ্রামের একটি ভুট্টা খেতে মাদারীপুরের অহিদুজ্জামানের (২৮) লাশ পাওয়া যায়।
মুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাম্মেল হোসেন মাতবরের ছেলে অহিদুজ্জামান মাদারীপুর আইন মহাবিদ্যালয়ে আইন এবং সরকারি নাজিম উদ্দিন মহাবিদ্যালয়ে এমএ পড়ার পাশাপাশি হাঙ্গার প্রজেক্টে খণ্ডকালীন কাজ করতেন।
ওই ঘটনায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন সিঙ্গাইর থানার এসআই আব্দুস ছালাম।
তদন্ত শেষে ছয়জনকে আসামি করে ২০১৪ সালের ২২ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন মানিকগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মদন মোহন বণিক।
আসামিদের মধ্যে লেলিন, শাহাবুদ্দিন, সেলিম গ্রেপ্তার হওয়ার পর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে সেলিম মারা গেলে তার নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, অহিদ ইতালি যাওয়ার জন্য আসামি রেজাউলের মাধ্যমে মহিউদ্দিনকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু ইতালিতে যেতে না পেরে অহিদ টাকা ফেরত চাইলে শুরু হয় দ্বন্দ্ব।
এর জের ধরে মহিউদ্দিন ও রেজাউলের পরিকল্পনায় ২০১৩ সালের ৬ মার্চে সকালে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে অহিদকে সাভারে ডেকে নেন আসামি শাহাবুদ্দিন, লেনিন ও সেলিম। অহিদকে বলা হয় সাভারের একজনের কাছে মহিউদ্দিন ইতালি থেকে টাকা পাঠিয়েছেন।
- আরও পড়ুন, সাবেক এমপি আমানুর রহমান রানার জামিন
অহিদ সাভারে গেলে তার পরনের জামা গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। লেলিন, শাহাবুদ্দিন, সেলিম, ফয়সাল সরাসরি ওই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়।
পরে মামলাটি বিচারের জন্য মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। বাদীপক্ষে ২২ জন সাক্ষ্য শেষে বিচারক রোববার রায়ের তারিখ রাখলেও সেদিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় রায় ঘোষণা হল বুধবার।
রায়ে প্রধান আসামি খালাস পাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে অহিদের মামা শেখ মো. হাবিবুল হক বলেন, এই রায়ের পেছনে ঘুষের লেনদেন হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই।
রায়ের পর এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি মো. মাহবুবুর রহমান এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, রায়ের কপি দেখে আমরা আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।