হার দিয়ে এবার কোপা আমেরিকা শুরু করেছিল আর্জেন্টিনা। কলম্বিয়ার কাছে ২-০ গোলে হেরেছিল লিওনেল স্কালোনির দল। আজ পরের ম্যাচে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে তাই জিততে মরিয়া ছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু কোনোমতে হার এড়াতে পেরেছে দলটি।
প্রথমার্ধে ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পর দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি থেকে লিওনেল মেসির গোলে সমতায় ফেরার সঙ্গে ১ পয়েন্ট তুলে নিতে পেরেছে আর্জেন্টিনা।
প্রথমে বেশ ছন্দেই খেলা শুরু করেছিল আর্জেন্টিনা। লিয়ান্দ্রো পারেদেস, জিওভান্নি ল চেলসোর সঙ্গে লিওনেল মেসির রসায়নটা জমেছিল বেশ। কিন্তু মিনিট বিশেক পর থেকে আর্জেন্টিনার কঙ্কালসার চেহারা বের হয়ে যায়। আর এর পেছনে প্যারাগুয়ের খেলোয়াড়দের শরীরনির্ভর খেলাও ভূমিকা রেখেছে।
৩২ মিনিটে লিওনেল মেসি সহজ একটা সুযোগ নষ্ট করেন। একদম বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। বার্সেলোনার হয়ে এই মৌসুমে এমন জায়গা থেকে ফ্রি-কিকে মুড়ি-মুড়কির মতো গোল করাটাকে অভ্যাসে পরিণত করা মেসি আলতো করে বল তুলে দিলেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের হাতে! গোল না খেয়ে প্যারাগুয়ে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে, নতুন উদ্যমে আক্রমণ করা শুরু করে। আর তারই সুফল পায় ৩৭ মিনিটে। ম্যাচে এগিয়ে যায় প্যারাগুয়ে।
বাঁ প্রান্তে নিজেদের অর্ধে সতীর্থের পাস পেয়ে দুর্দান্ত গতিতে বাইলাইন ধরে ছুটে যান প্যারাগুয়ের মিগুয়েল আলমিরন। গত জানুয়ারিতে এই আলমিরনকে পাওয়ার জন্যই ইংলিশ ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেড তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি খরচ করে। সেটা যে অমূলক ছিল না, মানসম্মত খেলা দেখিয়ে আজকে সেটা বুঝিয়েছেন তিনি।
আর্জেন্টিনার রাইটব্যাক মিল্টন কাসকো ও সেন্টারব্যাক নিকোলাস ওটামেন্ডি আটকাতে পারেননি আলমিরনের সেই দৌড়। আর্জেন্টিনার বিপদ সীমায় ঢুকে আলমিরন ক্রস বাড়ান বক্সে। সেখান থেকে প্লেসিং শটে বল জালে জড়িয়েছেন স্ট্রাইকার রিচার্ড সানচেজ। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এটাই সানচেজের প্রথম গোল। বলে ঠিকমতো শট নিতে না পারলেও ডান প্রান্ত দিয়ে তা জালে জড়ায়।
আর্জেন্টিনা এ গোল শোধ করেছে দ্বিতীয়ার্ধে, ম্যাচের ৫৭ মিনিটে। প্রথমার্ধের পর আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি উইঙ্গার রবার্তো পেরেইরাকে উঠিয়ে ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরোকে নামান। আগুয়েরো নামার সঙ্গে সঙ্গে আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগের চেহারা একটু হলেও বদলে যায়। নতুন উদ্যমে আক্রমণ করা শুরু করে তারা। আর সেটারই ফসল মেসির গোল।
প্যারাগুয়ের বক্সে হাফ ভলি শট নিয়েছিলেন স্ট্রাইকার লওতারো মার্টিনেজ। বল গিয়ে লাগে প্যারাগুয়ে ডিফেন্ডার ইভান পিরিসের হাতে। শটটার গতি এতই বেশি ছিল, হাতে লেগেও গোলমুখে চলে যায়। পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল মেসির কাছে আসলে তিনিও এক দুর্দান্ত শট নেন, কিন্তু সেই শট দক্ষতার সঙ্গে ফিরিয়ে দেন প্যারাগুয়ে গোলরক্ষক রবার্তো গাতিতো ফার্নান্দেজ। কিন্তু এত কিছুর আগে ওই যে পিরিসের হাতে বল লেগেছিল! সে কারণেই পেনাল্টির আবেদন করেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির বাঁশি বাজান মাঠের রেফারি।
যদিও পেনাল্টির সিদ্ধান্তটা অনেকটাই লঘু পাপে গুরুদন্ডের মতোই হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে মেসি সুযোগটা হাতছাড়া করেননি। স্পটকিক থেকে গোল করে সমতায় ফিরিয়েছেন দলকে।
আগুয়েরো মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে দলের খেলা যেমন ক্ষুরধার হয়েছিল, লওতারো মার্টিনেজের জায়গায় আনহেল ডি মারিয়া নামার সঙ্গে সঙ্গে আর্জেন্টিনার কার্যকারিতা যেন আরও কয়েক গুণ কমে যায়। পিএসজির হয়ে দুর্দান্ত খেলা ডি মারিয়া আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে খেলা ভুলে যান, এ সমস্যা নতুন নয়। কদাচিৎ দুর্দান্ত গোল করে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেন, যেমন গত বিশ্বকাপে ফ্রান্সের সঙ্গে একটা দুর্দান্ত গোল করেছিলেন।
- আরও পড়ুন >> নেপাল চ্যাম্পিয়নদের জালে আবাহনীর গোলবন্যা
কিন্তু এই কদাচিৎ দুই-এক গোল বাদে ডি মারিয়ার খেলা দেখে হতাশ হন না, এমন কোনো আর্জেন্টিনা সমর্থক পাওয়া যাবে না। আজকেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ম্যাচের শেষদিকে ডান প্রান্ত থেকে একটা ক্রস ঠিকঠাক পায়ে লাগিয়ে গোল করতে পারেননি মেসিও। একে তো বাজে খেলেছে আর্জেন্টিনা, তার ওপর এসব দুই-একটা সুযোগ কাজে না লাগানোর মাশুল হিসেবে জিততে পারেনি তারা।
তবে ম্যাচটা না জিততে পেরে প্যারাগুয়ে নিজেদের দুর্ভাগা ভাবতেই পারে। মেসির পেনাল্টির ঠিক পর পর পেনাল্টি পেয়েছিল প্যারাগুয়েও। নবিশ ডিফেন্ডারদের মতো পেছন থেকে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের বক্সে প্রতিপক্ষ উইঙ্গার দার্লিস গঞ্জালেসের পায়ে লাথি মেরে বসেন ম্যানচেস্টার সিটির ডিফেন্ডার নিকোলাস ওটামেন্ডি। সেই গঞ্জালেসের পেনাল্টিই রুখে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আরমানি, আর ওটামেন্ডিকে বাঁচিয়ে দেন আর্জেন্টিনা সমর্থকদের রোষানল থেকে!
পেনাল্টি থেকে গোল করতে না পারলে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হতো আর্জেন্টিনাকে। শেষ পর্যন্ত তা না ঘটলেও কোপার মতো বড় টুর্নামেন্টে কোচ হিসেবে স্কালোনির অদক্ষতা মোটা দাগেই ধরা পড়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আর্জেন্টিনার মতো অভিজাত দল ডিয়েগো ম্যারাডোনার পর স্কালোনিকে পেয়েছে, কোচ হিসেবে বড় টুর্নামেন্টে যাঁর কৌশলগত জ্ঞানের গভীরতা নেই বললেই চলে। আর তাতে আর্জেন্টিনা এখন কোপা আমেরিকা থেকে বিদায় নেওয়ার জোগাড়। কোয়ার্টারে উঠতে হলে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে কাতারকে হারাতেই হবে। না হারালে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় ঘন্টা বেজে যাবে আর্জেন্টিনার।