বাংলাদেশে সিজারের ৭৭ শতাংশই ‘অপ্রয়োজনীয়’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বাংলাদেশে সিজারের ৭৭ শতাংশই ‘অপ্রয়োজনীয়’
ফাইল ছবি

বাংলাদেশে গত দুই বছরে শিশু জন্মের ক্ষেত্রে সিজারিয়ান অপারেশনগুলো পর্যালোচনা করে একটি সংস্থা জানিয়েছে, এর ৭৭ শতাংশই ছিল অপ্রয়োজনীয়। সরকার কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিলেও ২ বছর আগের তুলনায় ৫১ শতাংশ সিজার বেড়েছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ এর এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এই সংবাদ প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। এতে জানানো হয়, ২০১৮ সালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে জনপ্রতি খরচ হয়েছে ৫১ হাজার টাকার বেশি।

এই পরিসংখ্যান সরকারের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সিজারিয়ান অপারেশন করতে হলে যুক্তিসঙ্গত কারণ লাগবে। অপ্রয়োজনে এই অপারেশন করলে ব্যবস্থা নেবেন তারা।

কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটাও জানান জনাব আজাদ।

তিনি বলেন, আমাদের অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটা ফরম দেয়া হচ্ছে। যেখানে সিজার অপারেশন করা হয় সেখানে এ ফরম পূরণ করে আমাদেরকে জানাতে হবে। তারা যে তথ্য দিচ্ছে এগুলো সঠিক কি না তা আমরা যাচাই করব। যারা প্রয়োজন না হওয়া সত্ত্বেও সিজার অপারেরেশন করবে তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার আমরা সেই ব্যবস্থাই নেব।

কিন্তু ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ বলছে, ২০১৮ সালে যত সিজারিয়ান হয়েছে তার ৭৭ শতাংশই চিকিৎসাগতভাবে অপ্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু তারপরও এমন সিজারিয়ান হচ্ছে।

সংস্থাটির মতে, কিছু অসাধু চিকিৎসক এর জন্য দায়ী, যাদের কাছে সিজারিয়ান একটি লাভজনক ব্যবসা।

স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে ঝুঁকি থাকলে পেট কেটে সন্তান বের করে আনা হয়। একে বলে সিজারিয়ান অপারেশন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে কোনো রকমের ঝুঁকি ছাড়াই এই অপারেশন করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে।

২০১৭ সালে সরকারি এক জরিপে দেখা গেছে দেশে স্বাভাবিক প্রসব ৬২ দশমিক ১ শতাংশ আর সিজারিয়ান ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং অন্যান্যভাবে ২ দশমিক ৫ শতাংশ সন্তানের জন্ম হয়।

ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে বা বিডিএইচএস-এর তথ্য অনুসারে, ২০০৪ সালে সিজারের মাধ্যমে সন্তান হতো ৪ শতাংশ, ২০০৭ সালে তা বেড়ে হয় ৯ শতাংশে। ২০১১ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ শতাংশে৷ আর ছয় বছরে এই সংখ্যাটি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

২০১৫ সালে প্রকাশিত স্বাস্থ্য বার্তায় বলা হয়েছে, যেসব বাচ্চার জন্ম সিজারিয়ানে হয়েছে, তাদের ৮০ শতাংশরই স্বাভাবিক প্রসব করানো যেত। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্মদান প্রায় ৮ গুণ বেড়েছে৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, একটি দেশে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব হার ১০-১৫ শতাংশের মধ্যে থাকা উচিত৷

বেসরকারি হাসপাতালগুলো বাচ্চা প্রসবের ক্ষেত্রে প্যাকেজের ব্যবস্থাও করেছে। প্রসূতি বা তার স্বজনদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় তারা কোনটা চান। অথচ সিরাজিয়ান অপারেশন লাগবে কি না, এটি প্রসূতি বা তার স্বজনদের সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় না।

বাংলাদেশে সেভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং নবজাতক ও মাতৃ-স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ইশতিয়াক মান্নান বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের এই জনপ্রিয়তা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে, দিনকে দিন মায়েরা আরও বেশি এই অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের দিকে ঝুঁকছেন।’

সিজারিয়ানের কয়েকটি ঝুঁকি

বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শিশু জন্মে অস্ত্রোপচারের ফলে সংক্রমণ, মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অঙ্গহানি, জমাট রক্ত ইত্যাদির কারণে মায়েদের সুস্থতা ফিরে পেতে প্রাকৃতিক প্রসবের তুলনায় অনেক দীর্ঘ সময় লাগে।

সিজারিয়ানের কারণে প্রাকৃতিক জন্মের লাভজনক দিকগুলোও নষ্ট হতে পারে। যেমন- শিশু মায়ের প্রসবের পথ দিয়ে যদি স্বাভাবিকভাবে বের হয় তাহলে তার শরীর কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া গ্রহণ করতে পারে। এসব ব্যাকটেরিয়া শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। কিন্তু অস্ত্রোপচারের ফলে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সে যেতে পারে না।

এছাড়া মায়ের বুকের দুধ পান করার জন্য মায়ের সঙ্গে শিশুর যে শারীরিক নৈকট্যে আসা দরকার, সিজারিয়ান হলে সেটি প্রয়োজনের তুলনায় দেরিতে ঘটে। কারণ, মায়ের সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য শিশুকে তখন কিছু সময় দূরে রাখা হয়।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে