ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর সেতু দিয়ে ভারী ও মাঝারি যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বিকল্প সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এতে জনদুর্ভোগও বেড়েছে কয়েকগুণ। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের দেখিয়ে দেয়া বিকল্প সড়কগুলো ভাঙাচোরা হওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। দীর্ঘ সময় যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দূরবর্তী গন্তব্যের যাত্রীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা-আখাউড়া সড়কটি এক বছর আগে থেকেই বেহাল হয়ে আছে। সড়কটির বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। বৃষ্টি হলেই পানি জমে সেসব গর্তগুলো পুকুরের আকার ধারণ করে। এ অবস্থায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী যানবাহনগুলো বিকল্প সড়ক হিসেবে চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক ব্যবহার করায় সড়কটির অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৮ জুন সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর এলাকার তিতাস নদীর ওপর সেতুটির চতুর্থ স্প্যানের ফুটপাতসহ রেলিং ভেঙে পড়ে। এর ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ওইদিন রাতেই সেতুটি দিয়ে সব ধরণের ভারী ও মাঝারি যানবাহন চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সওজ বিভাগ। এতে করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সরাসরি যোগাযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে। তবে সেতুর এক পাশ দিয়ে ছোট যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। বিকল্প হিসেবে সওজ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-নাসিরনগর ও হবিগঞ্জের লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ সড়ক ব্যবহার করতে বলে। তবে সময় বাঁচানোর জন্য ঢাকা-সিলেট, কুমিল্লা-সিলেট এবং চট্টগ্রাম-সিলেটের বেশিরভাগ যানবাহন বিকল্প হিসেবে চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে থাকে। এর ফলে অতিরিক্ত যানবাহানের চাপে নাজুক সড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এছাড়াও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যানবাহনগুলোর জন্য সওজ’র দেখিয়ে দেয়া বিকল্প সড়ক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক-রতনপুর আঞ্চলিক সড়কে ভারী যানবাহনের চাপে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সড়কটির অন্তত ৮-১০ স্থানে মরণ ফাঁদ তৈরি হয়েছে। সড়কের প্রতিটি সেতুর পাশে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে যানবাহন আটকে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে গন্তব্যে পৌঁছাতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সময় লাগছে যাত্রীদের।
স্থানীয়রা জানান, চান্দুরা-আখাউড়া সড়কটি দিয়ে আগে শুধুমাত্র সিএনজি অটোরিকশা চলতো। এখন ভাঙাচোরা এ সড়ক দিয়ে ঢাকা-সিলেট, কুমিল্লা-সিলেট ও চট্টগ্রাম-সিলেটের বেশিরভাগ যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবোঝাই ট্রাক চলাচল করছে। এর ফলে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে কালীরবাজার, মোল্লারটেক, নোয়াগাঁও ও আড়িয়লে বেশি যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের দিকে ছোটেন।
বিজয়নগর উপজেলা স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চান্দুরা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ কিলোমিটার। এর মধ্যে সাড়ে ১৭ কিলোমিটারই বিজয়নগর উপজেলায়। ২০১৮ সালে সড়কটি মেরামত করা হয় ২৪ লাখ টাকায়। এরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরও ছয় লাখ টাকার কাজ করানো হয়। কিন্তু কোনো কাজই টিকেনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন জানান, বিজয়নগর উপজেলার এই সড়ক এবং কসবা উপজেলার আরেকটি সড়কের কাজের জন্য একত্রে ৪৪ কোটি টাকার দরপত্র হয়েছে। দরপত্রের মূল্যায়নও শেষ হয়েছে। এটি এখন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিদেশি প্রকল্পের অধীনে কাজটি হবে বলে এর দরপত্র প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আল মামুন জানান, যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে শাহবাজপুর সেতুতে নতুন বেইলি সেতু স্থাপনের কাজ চলছে। মঙ্গলবার নাগাদ কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপরই সেতুটি শুধুমাত্র বাস চলাচালের জন্য খুলে দেয়া হবে। বাসগুলো সেতুর কাছে এসে যাত্রীদের নামিয়ে পারাপার হতে হবে। এছাড়া ভারী যানবাহন পারাপারের জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে একটি ফেরি আনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।