রেল ও সড়কপথের সমস্ত সেতু-কালভার্ট সার্ভে করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নড়বড়ে ও পুরনো সেতু চিহ্নিত করে বর্ষার আগেই যেন মেরামত করা যায় সেজন্য এ নির্দেশ।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকেও সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া উপবন এক্সপ্রেসের পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে হতাহতের ঘটনা উঠে আসে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।
একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেল ও সড়কের সমস্ত সেতু ও কালভার্ট সার্ভে করতে হবে। বর্ষার আগেই নড়বড়ে সেতু-কালভার্ট চিহ্নিত করে সংস্কার করা প্রয়োজন।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়টি জানান।
একনেকে ৬ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। ২৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১টি রেল ইঞ্জিনের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ফলে পুরাতন রেল ইঞ্জিনগুলো আরো ২০ বছর রেলপথে পরিচালনা করা যাবে। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ২৭২টি ডিজেল ইঞ্জিন ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ রয়েছে। এরমধ্যে ১৯৬টির অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। এ অবস্থায় রেলের গতি বাড়াতে নতুন ইঞ্জিন কেনার পাশাপশি এগুলোকে মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে এই ইঞ্জিনগুলো আরও ২০ বছর সেবা দিতে পারবে।
‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ২১টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ নবরূপায়ণ’ প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সাল নাগাদ এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় রেলপথে ৪২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বামনডাংগা (গাইবান্ধা)-শঠিবাড়ী-আফতাবগঞ্জ (দিনাজপুর) জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ’ প্রকল্প; ৩ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন জোনের প্রধান সংযোগ রাস্তাগুলি প্রশস্তকরণসহ নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
‘অফিসার্স ক্লাব, ঢাকার ক্যাম্পাসে বহুতল ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পে ২২৮ এবং ‘মানিকগঞ্জ বহুতল বিশিষ্ট সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পে ৯৫ কোটি ব্যয় ধরা হয়েছে।
‘ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্পে ৯৮ কোটি ‘দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র পুনঃনির্মাণ (গাজীপুর)’ প্রকল্প ৮১ কোটি ৬৬ লাখ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ কোটি টাকা।
২০০ কোটি ৬০ লাখ টাকায় ‘বৃহত্তর ফরিদপুর সেচ এলাকা উন্নয়ন (৪র্থ পর্যায়)’ প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ওয়েস্ট জোন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও আপগ্রেডেশন’ প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি; শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন; স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক; বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি; গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন; ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সভার কার্যক্রমে অংশ নেন।
সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।