দেশের অন্যতম রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও গত দুই দিনে তাদের জনশক্তি অর্ধেকের বেশি ছাঁটাই করেছে।জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার পাশাপাশি তহবিল তুলতে হাপিত্যেশ করতে হচ্ছে এশিয়ার দ্রুত বর্ধনশীল এই টেক স্টার্টঅ্যাপটিকে।
বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, মাঝারি থেকে উচ্চ পর্যায়ের অন্তত ৩০০ কর্মীকে ছাঁটাই করেছে তারা। চাকরিচ্যুতদের মধ্যে পাঠাওয়ের ফুড অ্যান্ড রাইড কোর সার্ভিসের প্রধানও রয়েছেন।
চট্টগ্রাম ও সিলেটের জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদেরও পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা এমন তথ্য জানিয়েছেন।
পাঠাওয়ের অর্থবিভাগ বলছে, বিনিয়োগকারীরা সরে যাওয়ায় মাত্র কয়েকটি মাস চলার মতো তহবিল আছে তাদের। এতে এই চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পাঠাওয়ের শীর্ষ ব্যবস্থাপনা ১০ কোটি মার্কিন ডলার তোলার চেষ্টা করেও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ায় বর্তমান বিনিয়োগকারীরা প্রধান নির্বাহী হুসেইন এমডি ইলিয়াসসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নির্বাহীকে পদত্যাগ করতে বলেছেন।
২০১৫ সালে জনপ্রিয় এই রাইড-শেয়ারিং ব্যবসার সহপ্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস পদত্যাগে অস্বীকার করেছেন।
রাজধানীতে মোটরসাইকেল ট্যাক্সিসেবা দিয়ে শুরু হয় পাঠাওয়ের যাত্রা। প্রথমেই ভালো চমক দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এরপর বছর দুয়েকের মাথায় ইন্দোনেশীয় রাইড-শেয়ারিং কোম্পানি জিও-জেইকে থেকে বড় ধরনের অর্থ পেয়েছে তারা। যেটা পরিমাণ অবশ্য প্রকাশ করা হয়নি।
পরে অলটার গ্লোবাল ও ওপেনস্পেস এতে জড়িয়ে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোগত সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রেখেছে।
এক পর্যায়ে গত বছর ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট-এই তিন শহরে পাঠাওয়ের রাইড নম্বর একদিনে তিন লাখ ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু উবার ঢাকায় মোটরসাইকেল সেবা দেয়া শুরুর পর এটির জনপ্রিয়তা কমে গেছে।
পদত্যাগে বাধ্য হওয়া এক জ্যেষ্ঠ নির্বাহী বলেন, পাঠাওয়ের দৈনিক রাইড সংখ্যা কমে ২০ হাজারে নেমে এসেছে। কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি হচ্ছে বিধি না মানা। জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার এটি অন্যতম কারণ।
বরখাস্ত হওয়া এক কর্মী জানান, মঙ্গলবার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের সব ধরনের সরঞ্জাম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হবে বুধবার তাদের লাইনও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বরখাস্তের চিঠি হস্তান্তরের পর কর্মীদের দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে বলা হয়।
পাঠাওয়ের আনুষ্ঠানিক ওয়েবসাইট জানিয়েছে, বিদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশে সেবা দিচ্ছে পাঠাও লিমিটেড। ইতিমধ্যে তারা পাঁচ কোটি ট্রিপ দিয়েছে। আর ৫০ লাখ বার তাদের অ্যাপ ডাউনলোড করা হয়েছে।
বর্তমানে বাইক সার্ভিস ছাড়াও কার সার্ভিস, কুরিয়ার সার্ভিস ও ফুড পার্সেল সার্ভিস রয়েছে পাঠাওয়ের। গত বছর নেপালেও ব্যবসা শুরু করেছে পাঠাও।
বুধবার বিকালে একটি জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে পাঠাও বলেছে, তারা ব্যবসায়িক বিকাশের নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে কিছু কৌশলগত নীতি অবলম্বন করছে।
এতে তাদের ব্যবসার মূল শাখাগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে দক্ষতা বাড়াবে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যয় বৃদ্ধি রোধে সহায়তা করবে বলে পাঠাও কর্তৃপক্ষ আশা করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, পরিবর্তনের এই প্রভাব পাঠাও এর সাংগঠনিক অবকাঠামোসহ এর ব্যবসার সর্বস্তরে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর ঘটাবে।