বরগুনায় দিন-দুপুরে স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটিকে খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা দুপুর ২টার মধ্যে জানাতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেছে হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর এ আদেশ দেন বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালত বলেছে, সারা দেশের সবাই এই ঘটনায় মর্মাহত। সমাজটা কোথায় যাচ্ছে? প্রকাশ্য রাস্তায় মানুষটাকে মারলো। একজন ছাড়া কেউ এগিয়ে আসলো না। জনগণকে আপনি কী করবেন? বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন ছিলো না। ভিডিও করলো, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসলো না। এটি জনগণের ব্যর্থতা।
‘তাই এই সামাজিক সচেতনতা তৈরি করবে কে? দাঁড়িয়ে দেখেছে, কেউ প্রতিবাদ করলো না। পাঁচজন মানুষ অন্তত এগিয়ে আসলে হয়তো তারা সাহস পেত না। হয়তো তারা (দুর্বৃত্তরা) ক্ষমতাবান, হয়তো মানুষ ভয়ে এগিয়ে আসেনি।’
প্রতিবেদনগুলো আদালতের নজরে এনে আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস বলেন, এমন অপরাধের ঘটনার বিচার যদি কোনো কারণে বিলম্ব হয় ও বিচারহীন হয়, তাহলে আরও এমন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। তবে বিচার হবে আশা করছি।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফ (২২) নামে এক যুবককে কুপিয়ে জখম করে সাবেক স্বামী নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে বরগুনা সদর হাসপাতাল ও পরে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল (শেবাচিম) কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে বিকেল ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন রিফাতের মৃত্যু হয়।
রিফাত বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়নের মাইঠা লবনগোলা এলাকার দুলাল শরীফের ছেলে।
এদিকে ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করা গেছে। এদের মধ্যে নয়ন বন্ড, তার বন্ধু নিশান ফরাজি ও রাব্বি আকনের নাম জানা গেছে।
অভিযুক্ত নয়ন বন্ডের মা সাহেদা বেগম জানান, ৭ মাস আগে স্থানীয় কাজী অফিসে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে তার ছেলে নয়নের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে হয়। পরে মিন্নির সঙ্গে রিফাতের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন নয়ন। এ নিয়ে তাদের দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। একপর্যায়ে বিচ্ছেদে রূপ নেয় তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক। মাস দু’য়েক আগে মিন্নি নয়নকে ডিভোর্স দেন। এর কিছুদিন পরই রিফাতকে বিয়ে করেন মিন্নি।
নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ জানান, দুই মাস আগে রিফাত পুলিশ লাইন এলাকার কিশোরের মেয়ে আয়শা আক্তার মিন্নিকে বিয়ে করে। নিজের সাবেক স্ত্রী দাবি করে পশ্চিম কলেজ সড়কের নয়ন নামে এক যুবককে প্রায়ই মিন্নিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। এক পর্যায়ে ফেসবুকে আপত্তিকর ছবিও পোস্ট করে সে। এ নিয়ে রিফাতের সঙ্গে নয়নের বিরোধিতা তৈরি হয়। এর জেরে সকালে রিফাতকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যায়। এ সময় নয়নের সঙ্গে নিশান ফরাজি ও রাব্বি আকন নামে তার দুই সহযোগীও ছিলো।