সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) বাংলাদেশিদের সঞ্চয় বেড়েছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশিদের মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্র্যাংক।
বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। (প্রতি সুইস ফ্র্যাংক ৮৭ টাকা হিসাবে)। জমাকৃত এ টাকার পরিমাণ দেশের কমপক্ষে ১২টি বেসরকারি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সমান।
২০১৭ সালে এর পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে আলোচ্য বছরে ১ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা বেড়েছে। শতকরা হিসাবে যা প্রায় ২৯ শতাংশ।
এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। তবে আলোচ্য বছরে এই দু’দেশের আমানত কমেছে। বৃহস্পতিবার সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কোনো বাংলাদেশি তার নাগরিকত্ব গোপন রেখে টাকা জমা করলে তার তথ্য এই প্রতিবেদনে নেই। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগ না হওয়ায় পুঁজি পাচার হচ্ছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে দেশে নির্বাচন হওয়ায় টাকা পাচার বেড়েছে।
আলোচ্য সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের আমানতও বেড়েছে। আমানত রাখার ক্ষেত্রে এ বছরও বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। তবে আলোচ্য সময়ে সুইস ব্যাংকে সারা বিশ্বের আমানত কমেছে। আগামী বছরের এ সময়ে চলতি ২০১৯ সালের রিপোর্ট প্রকাশিত হবে।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সাধারণভাবে বাংলাদেশে একটি অদ্ভুত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একদিকে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ নেই; অপরদিকে তারাই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। কী কারণে এটি হচ্ছে তা বোঝা দরকার।
তিনি বলেন, কয়েকটি কারণে এই টাকা পাচার হতে পারে। যেমন: তারা বিনিয়োগের পরিবেশ পাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় টিকে থাকতে পারছে না। অথবা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের প্রতি তাদের আস্থা নেই।
সামগ্রিকভাবে কেন উচ্চবিত্তরা দেশে টাকা রাখে না, সেটি অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। যদি এ ধরনের কাজ আইনের আওতায় না এনে প্রশ্রয় দেয়া হয়, তবে এটি বাড়তে থাকবে। এ অবস্থা উত্তরণে আমরা বড় ধরনের সংস্কারের কথা বলছি।
তার মতে, টাকা তছরুফের তিনটি খাত। এগুলো হল- ব্যাংকিং, শেয়ারবাজার এবং আমদানি খাত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পণ্য আমদানির নামে বিদেশে টাকা পাচার করা। ফলে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকে।
- আরও পড়ুন >> কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিল
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, এই আমানতের বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে। ঢালাওভাবে পাচারের তথ্য যেভাবে বলা হচ্ছে, তা ঠিক না। কারণ সুইস ব্যাংকের টাকার মধ্যে বিদেশে অবস্থান করা বাংলাদেশি নাগরিকদের আমানতের তথ্যও রয়েছে। তবে তিনি বলেন, কোনো বাংলাদেশিকে টাকা রাখার অনুমতি দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশিদের আমানত :
২০১৮ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতের স্থিতি ছিল ৬১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৭ সালে যা ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ ফ্র্যাংক, ২০১৬ সালে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ, ২০১৫ সালে ৫৫ কোটি ০৮ লাখ, ২০১৪ সালে ৫০ কোটি ৬০ লাখ, ২০১৩ সালে ৩৭ কোটি ২০ লাখ, ২০১২ সালে ২২ কোটি ৯০ লাখ, ২০১১ সালে ছিল ১৫ কোটি ২০ ফ্র্যাংক। স্বর্ণালংকার, শিল্পকর্ম এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র জমা রাখলে তার আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে আমানতে যোগ হয় না।
১০ বছরে বাংলাদেশিদের আমানত :
২০০২ সালে ছিল ৩ কোটি ১০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০০৩ সালে ৩ কোটি ৯০ লাখ ফ্র্যাংক, ২০০৪ সালে ৪ কোটি ১০ লাখ, ২০০৫ সালে ৯ কোটি ৭০ লাখ, ২০০৬ সালে ১২ কোটি ৪০ লাখ, ২০০৭ সালে ২৪ কোটি ৩০ লাখ, ২০০৮ সালে ১০ কোটি ৭০ লাখ, ২০০৯ সালে ১৪ কোটি ৯০ লাখ এবং ২০১০ সালে ছিল ২৩ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি গভীর উদ্বেগজনক। কারণ সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের যে টাকা রাখা হয়েছে, সেটা মূলত দুর্নীতির।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের মূলত তিনটি কারণ। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতি বেড়েছে বলেই অর্থ পাচারও বেড়েছে। এ ছাড়া দেশে বিনিয়োগ পরিবেশের অভাব, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণেও অর্থ পাচার বাড়ছে।
ড. এবি মির্জ্জা বলেন, অর্থ পাচার রোধ করতে হলে দুর্নীতি কমিয়ে আনার বিকল্প নেই। পাশাপাশি বিনিয়োগ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। নাগরিক জীবনেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
মোট আমানত :
প্রতিবেদন অনুসারে আলোচ্য সময়ে বিশ্বের সব কটি দেশের আমানত কমেছে। আলোচ্য বছরে বিভিন্ন ব্যাংকে আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে যা ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। এ হিসাবে আমানত কমেছে ৮ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। এ ছাড়াও ২০১৬ সালে ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি ফ্রাংক। ২০১৫ সালে সুইস ব্যাংকে বিদেশিদের মোট আমানত ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি ফ্র্যাংক।
অন্যদিকে চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) রিপোর্টে বলা হয়েছে। ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
যা আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি। একক বছর হিসেবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে চার প্রক্রিয়ায় ৫৯০ কোটি ডলার পাচার হয়। দেশীয় মুদ্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে ২টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব।
জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪টি প্রক্রিয়ায় এ অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বিদেশ থেকে পণ্য আমদানিমূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রফতানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং), হুন্ডি ও অন্য মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন এবং ভিওআইপি ব্যবসা।
পাচার হচ্ছে মোট বাণিজ্যের ২০ শতাংশ
এ ছাড়াও টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের প্রায় ২০ শতাংশই কোনো-না-কোনোভাবে পাচার হচ্ছে। টাকা পাচারের তথ্য এসেছে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপির রিপোর্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজে প্রকাশিত পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে।
সূত্র বলছে, দুর্নীতি ও চোরাচালানের মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। ওইসব টাকায় দুর্নীতিবাজরা বিদেশে সম্পদ গড়ে তুলছে, জমা রাখছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। এর বাইরে আরও অনেক ব্যাংকে বাংলাদেশের পাচারকারীদের টাকা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে মালয়েশিয়া সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিদেশির জন্য মালয়েশিয়ান সরকারের সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী। দেশ থেকে বিদেশে কোনো টাকা নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগে।
কিন্তু এ পর্যন্ত কাউকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ ধরনের কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। তারপরও বাংলাদেশ মালয়েশিয়ায় কীভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ হল। কানাডায় রয়েছে বাংলাদেশি অধ্যুষিত অঞ্চল বেগম পাড়া। এ ছাড়া ব্রিটেন, হংকং, সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ব্যাংকেও বাংলাদেশিদের টাকা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
টাকা পাচার বলার কারণ :
সুইস ব্যাংক মূলত তাদের প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত বিদেশিদের আমানতের তথ্য প্রকাশ করে। কিন্তু বাংলাদেশি আইনে কোনো নাগরিকের বিদেশি ব্যাংকে আমানত রাখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায় এখন পর্যন্ত কাউকে বিদেশে টাকা জমা রাখার বিশেষ অনুমোদনও দেয়া হয়নি।
এ ছাড়া কোনো প্রবাসীও সরকারকে জানাননি যে, তিনি সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছেন। ফলে সুইস ব্যাংকে জমা পুরো টাকাটাই দেশ থেকে পাচার হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়।
দীর্ঘ সময় ধনীদের অর্থ গোপনে জমা রাখার জন্য খ্যাত সুইজারল্যান্ড। ৮০ লাখ মানুষের এ দেশটিতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৫৩টি ব্যাংক রয়েছে। বিশ্বের বড় বড় ধনী ব্যক্তি অর্থ পাচার করে দেশটিতে জমা রাখেন। ব্যাংকগুলোও কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে।
আগে সুইস ব্যাংকে জমা টাকার কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো না। এমনকি আমানতকারীর নাম-ঠিকানাও গোপন রাখা হতো। একটি কোড নম্বরের ভিত্তিতে টাকা জমা রাখা হতো। কিন্তু ২০০২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী টাকা পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর করা হয়।
এরপর আন্তর্জাতিক চাপে সুইস ব্যাংক জমা টাকার তথ্য প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে তারা ওই সময় থেকে বিভিন্ন দেশের জমা টাকার তথ্য প্রকাশ করছে। ওই প্রতিবেদনে কোন দেশের কত টাকা জমা আছে সে তথ্য তারা প্রকাশ করছে। আমানতকারীদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করছে না। ফলে পাচারকারীদের ঠেকানো যাচ্ছে না।
টাকা পাচার :
অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্যহীনতায় পুঁজি পাচার হয়। এ হিসেবে দেখা গেছে, দেশে সঞ্চয় বাড়ছে, কিন্তু বিনিয়োগ বাড়ছে না। ওই টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। নানাভাবে টাকা পাচার হচ্ছে।
নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ম্যানেজ করে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও পণ্য আমদানির নামে ঋণপত্রের মাধ্যমেও পাচার হচ্ছে। কম দামে কম পণ্য এনে দেনা শোধ করা হচ্ছে বেশি দাম ও বেশি পণ্য দেখিয়ে। ভুয়া এলসি খুলে পণ্য আমদানি না করেই টাকা পাচারের ঘটনাও ঘটছে।
রফতানি পণ্যের একটি অংশের মূল্য দেশে আসছে না। ওই টাকাও পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। নগদ ডলার বা স্বর্ণের মাধ্যমেও দেশ থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া চিকিৎসা ব্যয়, বিদেশ ভ্রমণ, লেখাপড়ার খরচ- এসব মাধ্যমেও টাকা পাচার হচ্ছে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমেও টাকা পাচার হচ্ছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের আমানত :
সুইস ব্যাংকে আমানত রাখার দিক থেকে এ বছর প্রথম অবস্থানে যুক্তরাজ্য। ২০১৮ সালে দেশটির আমানতের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৬১১ কোটি ফ্র্যাংক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৪ হাজার ২১৫ কোটি, সিঙ্গাপুর ৩ হাজার ১৭২ কোটি, চীন ১ হাজার ৩৩৩ কোটি, রাশিয়া ১ হাজার ২৯২ কোটি, সৌদি আরব ৯৪৫ কোটি এবং মালয়েশিয়া ২৪০ কোটি ফ্র্যাংক।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের আমানত গত বছরের চেয়ে কমেছে। আলোচ্য বছরে দেশটির আমানতের পরিমাণ ৭২ কোটি ফ্র্যাংক, ভারত আগের বছরের চেয়ে ৭ কোটি ফ্র্যাংক কমে ৯৩ কোটি ৯৫ লাখে নেমে এসেছে। এ ছাড়াও নেপাল ২৪ কোটি ৮৭ লাখ, আফগানিস্তান ২ কোটি ৭৮ লাখ এবং মিয়ানমারের ৪৮ লাখ ফ্র্যাংক আমানত রয়েছে।