থানায় যেভাবে কাটছে ডিআইজি মিজানের সময়

আদালত প্রতিবেদক

ডিআইজি মিজান
ডিআইজি মিজান। ফাইল ছবি

হাইকোর্টের নির্দেশে থানা হাজতে চার দেয়ালের মাঝে বন্দি সমালোচিত পুলিশ কর্মকর্তা ডিআইজি মিজান। তবে থানায় অন্য বন্দিদের মতো তাকে হাজতে থাকতে হচ্ছে না। বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে একটু ‘সম্মান পাচ্ছেন’তিনি।

ঘরে স্ত্রী থাকতেও অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে নারীকে বিয়ে করা, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাকে গ্রেপ্তার করা, নারী উপস্থাপিকা ও তার স্বামীকে হত্যার হুমকি দেওয়া, দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদ অর্জন ছাড়াও নানা অভিযোগ এই ডিআইজির বিরুদ্ধে।

universel cardiac hospital

নানা অভিযোগে এরই মধ্যে বরখাস্ত হয়েছেন তিনি। দুর্নীতির মামলার আসামি হয়েছেন। আর এই মামলায় আগাম জামিন নিতে গিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশে আটক হয়েছেন আজ সোমবার।

আজ বিকালে হাইকোর্ট থেকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয় ডিআইজি মিজানকে। তাকে রাখা হয় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে।

এমনিতে কোনো আসামিকে বন্দি করা হলে তাকে সাধারণ হাজতিদের (পুরুষ) কক্ষে রাখা হয়। তোষক-জাজিমের ব্যবস্থা না থাকলেও ফ্লোরে থাকে কম্বল বা কাঁথা। সেটা জড়িয়েই ঘুমাতে হয় রাতে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে ডিআইজি মিজানকে বন্দি করে থধানাই নেওয়ার তাকে ওসির রুমে গল্প করে সময় কাটাতে দেখা গেছে।

শাহবাগ থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, রাতে তাকে (মিজান) সাধারণ হাজতিদের কক্ষে রাখা হচ্ছে না। রাত বাড়লে তাকে অন্য একটি রুমে রাখা হবে। অপরাধী হলেও তিনি পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাই একটু সম্মান করেই রাখা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, আমরা আদালত থেকে তাকে থানা হেফাজতে নিয়েছি। দিনের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় আজ তাকে নিম্ন আদালতে হাজির করা যায়নি। তিনি রাতে থানা হাজতেই থাকবেন। মঙ্গলবার সকালে তাকে আদালতে নেওয়া হবে।

ডিআইজি মিজান এদিন হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইতে গিয়েছিলেন। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এস কুদ্দুস জামানের বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

আদালতের এ নির্দেশের পর ডিআইজি মিজান হাইকোর্টেই ছিলেন। আদালত থেকে নির্দেশনা পেয়ে শাহবাগ থানার ওসিসহ পুলিশের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে যান এবং তাকে থানায় নিয়ে আসেন।

এর আগে হাইকোর্টে ডিআইজি মিজানের আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহেদী জামিন চেয়ে বলেন, জঙ্গি দমনে ডিআইজি মিজানের অনেক ভূমিকা রয়েছে। এই বিবেচনায় আসামি জামিন পেতে পারে।

এরপর হাইকোর্ট বলেন, ডিআইজি মিজান দুদক সম্পর্কে প্রকাশ্যে যে কথাবার্তা বলেছেন তা পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। ঘুষ দেওয়ার বিষয়ে তিনি ডেসপারেট বক্তব্য দিয়েছেন। …তার জামিন হবে না। আমরা তাকে পুলিশে দেব।- এই বলে ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদন নাকচ করেন হাইকোর্ট।

গত ২৫ জুন রাতে ডিআইজি মিজানকে বরখাস্ত করে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে আদেশ জারি করা হয়।

বহু ঘটনার পর গত ২৪ জুন ডিআইজি মিজানুর রহমানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।  মামলার অপর তিন আসামি হলেন- মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না ওরফে রত্না রহমান, ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগ্নে পুলিশের এসআই মাহমুদুল হাসান।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে তিন কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তিন কোটি সাত লাখ পাঁচ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা, ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং আইনের ৪(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি দুদকের ঢাকা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে করা হয়। দুদক পরিচালক মনজুর মোরশেদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে