বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে লর্ডসে আজ পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এ ম্যাচে সাকিব আল হাসানকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে দারুণ এক রেকর্ড।
জাদুকর তার ব্যাট থেকে আসল বিস্ময়টা কি প্রদর্শন করবেন আজ শেষ লড়াইয়ে? সেমিফাইনালে ওঠার দৌড় থেমেছে সবশেষ ম্যাচেই। তাই ভালো খেলে জয় ছাড়া প্রত্যাশার আর কোনো চাপ নেই। একে তো টুর্নামেন্টটি বিশ্বকাপ, সেখানে ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’ করতে চায় যেকোনো দলই। ক্রিকেটাররাও এর বাইরের নন। শেষটা আলাদা করে রাঙিয়ে দিতে চান যে কেউ। সাকিব আল হাসানও নিশ্চয়ই চাইছেন। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত যতটুকু দিয়েছেন, তাতেই কিংবদন্তিদের কাতারে ঢুকে পড়েছেন এ অলরাউন্ডার। কিন্তু ওই যে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ, ভালো করার আলাদা একটা তাড়না তো থাকেই।
লর্ডসে আজ বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এ ম্যাচে চাপ বলে যদি কিছু থাকে, সেটি পাকিস্তানের কাঁধে। সেমিতে উঠতে তাদের এমন সমীকরণ মেলাতে হবে, যা অলৌকিক কিছু না ঘটলে কেবল স্বপ্নেই সম্ভব। অন্যদিকে বাংলাদেশ দল চায় ম্যাচটা জিতে শেষটা রাঙিয়ে দিতে। আর এই শেষ ম্যাচেই সাকিবকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে আরেকটি রেকর্ড। ভালো পারফরম্যান্স করতে সাকিবের সব সময়ই এক ধরনের তাড়না, প্রেরণা কিংবা ‘কিক’ দরকার হয়—সে কথা সাকিব নিজেই বলেছেন আয়ারল্যান্ড সিরিজে। যেহেতু এক রেকর্ড হাতছানি দিয়ে ডাকছে তাকে—দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে ছিটকে পড়লেও ভালো করার তাগিদটুকু এখনো বুদ্বুদ করার কথা সাকিবের মনের মধ্যে। তা কী সেই রেকর্ড?
তেমন বড় কিছু না। কিন্তু বাংলাদেশ দলের জায়গা থেকে ভাবলে মোটেই ছোট নয়। এ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সাকিবের রানসংখ্যা ৫৪২। বাংলাদেশের ৭ ম্যাচে (বাকি ম্যাচটি বৃষ্টিতে পণ্ড) ৭ ইনিংসেই তিনে ব্যাট করে এ রান করেছেন সাকিব। বিশ্বকাপের এক টুর্নামেন্টে তিনে কিংবা তিন থেকে তার নিচে ব্যাট করে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তোলার নজির। একই পজিশনে বিশ্বকাপের এক টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান তোলার রেকর্ড মাহেলা জয়াবর্ধনের। ২০০৭ বিশ্বকাপে ১১ ম্যাচে ১১ ইনিংস খেলে ৫৪৮ রান করেছিলেন লঙ্কান কিংবদন্তি। অর্থাৎ জয়াবর্ধনের রেকর্ডটি নিজের করে নিতে সাকিবের চাই আর মাত্র ৭ রান।
ব্যাটিং অর্ডারে তিনে সাধারণত দলের সেরা ব্যাটসম্যানটি নেমে থাকেন। বিশ্বকাপে এ পজিশনে দলের হয়ে রাঙিয়েছেন রিকি পন্টিং, জ্যাক ক্যালিস, কুমার সাঙ্গাকারা, এবি ডি ভিলিয়ার্স, রাহুল দ্রাবিড়ের মতো কিংবদন্তিরা। যেমন ধরুন, ২০১৫ বিশ্বকাপে তিনে কিংবা তার নিচে নেমে সর্বোচ্চ রান সাঙ্গাকারার (৫৪১)। একইভাবে ২০০৭ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে পন্টিং (৫৩৯), দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ক্যালিস (৪৮৫), ১৯৯৯ বিশ্বকাপে দ্রাবিড় (৪৬১) এ পজিশনে দুর্দান্ত করেছেন। কিন্তু সাকিব ছাপিয়ে গেছেন তাদের সবাইকে।
বিশ্বকাপে ন্যূনতম তিনে কিংবা তার নিচে নেমে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড রিকি পন্টিংয়ের (৪৬ ম্যাচে ১৭৪৩)। এরপর সাঙ্গাকারা (৩৭ ম্যাচে ১৫৩২), ক্যালিস (৩৬ ম্যাচে ১১৪৮), জয়াবর্ধনে (৪০ ম্যাচে ১১০০) ও জাভেদ মিঁয়াদাদ (৩৩ ম্যাচে ১০৮৩)। ছয়ে আছেন সাকিব (২৮ ম্যাচে ১০৮২)। ম্যাচসংখ্যায় সাকিব আগের নামগুলো থেকে বেশ পিছিয়ে। ৩২ বছর বয়সী এ অলরাউন্ডার নিশ্চয়ই আগামী বিশ্বকাপেও খেলবেন। সেখানে মোটামুটি পারফর্ম করলেও কিংবদন্তিদের এ তালিকায় আরও ওপরের দিকে উঠবেন সাকিব।