বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) নদী উদ্ধারে চলমান উচ্ছেদ অভিযানে ৪০ দিনে চার হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর দখলমুক্ত হয়েছে নদী তীরভূমির সাড়ে ৯৬ একর জায়গা। এ সময়ে নিলামে আদায় ছয় কোটির টাকা বেশি। কয়েক লাখ টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার উচ্ছেদ অভিযানের চতুর্থ পর্বের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রথম দিনের অভিযানেও দুটি সাত তলা ভবনসহ ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৪৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বিআইডাব্লিউটিএ। এদিনও উদ্ধার হয়েছে নদী তীরভূমির প্রায় আধা একর জায়গা।
সকালে বুড়িগঙ্গা নদীর কামরাঙ্গীরচরের নবাবের চর এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তরপাড় থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এ সময় নদীর তীরের ৪৭টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। যা নদীর জায়গা দখল করে অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল।
এছাড়া নদীর দখলকৃত প্রায় আধা একর জায়গা অবমুক্ত হয়েছে বলে মত ও পথকে জানিয়েছেন বিআইডাব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন।
৪০তম দিনের অভিযানে নদী তীরে গড়ে তোলা দুটি সাত তলা পাকা ভবন, একটি দোতলা, পাঁচটি একতলা ভবন উচ্ছেদ করা হয়।
এছাড়া ১২টি আধা পাকা স্থাপনা, ১৯টি টিনের ঘর ও আটটি দোকান উচ্ছেদ হয়েছে বলে বিআইডাব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সংস্থাটির যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন জানান, কামরাঙ্গীরচরের খোলামুড়া ঘাট এলাকা থেকে উচ্ছেদ শুরু হয়। প্রথম ধাপে উচ্ছেদ করা স্থাপনাগুলোর মধ্যে কিছু কিছু স্থাপনায় দখলদাররা পুনরায় বসবাসের চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের এক্সেভেলেটরের একটা নির্দিষ্ট উচ্চতা আছে। তাই আমরা তখন বড় ভবনগুলো ভাঙতে পারিনি। তারা (দখলকারীরা) এটিকে সরিয়ে নেয়ার কথা ছিল। তারা কিছু অংশ ভেঙে সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেয়া চিহ্ন পর্যন্ত ভাঙেনি। তারা ওই ভবনে একটি মাদ্রাসা তৈরি করেছিল। একটা ধর্মীয় অনুভূতি তৈরির চেষ্টা করেছিল। আজ আমরা সেটিকে ভাঙলাম।
আরিফ উদ্দিন বলেন, পাশের একটি সাত তলা ভবন, সেটিকে প্রথমবার যখন ভাঙতে এসেছিলাম, তখন এখানে অনেক বৃদ্ধ মানুষ ছিল। মানবিক কারণে আমরা পুরো ভবনটি ভাঙিনি। আজ দেখা গেল তারা ভাঙা অংশটিকে মেরামত করে আবার বসবাস শুরু করেছে। সে ভবনটিও আজ ভাঙা হয়েছে।
নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য সীমানা পিলার বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে কাজ করছে বিআইডাব্লিউটিএ। তাই এখন আর কাউকে কোনো সময় বা সুযোগ দেয়া হবে বলে জানান এ কে এম আরিফ উদ্দিন।
তিনি বলেন, নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। এজন্য নদীতে সীমানা পিলার স্থাপন করতে হবে। সীমানা পিলার সঠিক স্থানে বসাতে দোকানপাট, স্থাপনাগুলো ভাঙতে হচ্ছে। এখন আর সময় দেয়ার সময় নেই। আমরা যেখানে মানবিকতা দেখিয়েছিলাম, তারা সেখানেই পুনরায় বসবাসের চেষ্টা করেছে। নদীর ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তুরাগ এবং বালু নদীর তীরভূমিতে অবৈধ স্থাপনাগুলো এরই মধ্যে উচ্ছেদ হয়েছে বলে তিনি জানান। যদিও বুড়িগঙ্গার কিছু অংশ এখনো উচ্ছেদের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। চতুর্থ পর্বের অভিযানে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। কিছু পরিমাণ জায়গা আদালতের স্থতিগাদেশের কারণে কিছু হাউজিং কোম্পানির প্রতিষ্ঠান, কিছু ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠান এবং কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে এসব স্থাপনাও উচ্ছেদের কথা জানিয়েছেন সংস্থাটির এই যুগ্ম পরিচালক।
- গান্ধীর জন্মদিনে এমপিদের ১৫০ কিমি হাঁটার নির্দেশ
- সরকারি কলেজগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
- সংকটে সরকারি-বেসরকারি ১০ ব্যাংক
এছাড়া চতুর্থ পর্বের প্রথম পর্যায়ের প্রথম দিন ১৯৮টি স্থাপনা উচ্ছেদ ও দুই একর জায়গা উচ্ছেদ করা হয়। দ্বিতীয় দিন ১৫১টি স্থাপনা উচ্ছেদ এবং উদ্ধার হয় দেড় একর জায়গা। তৃতীয় দিন ৮৮টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি উদ্ধার হয়েছে নদী তীরভূমির আরো দেড় একর জায়গা। ৪০ দিনের অভিযান শেষে মোট উচ্ছেদ হয়েছে চার হাজার ৫৯টি স্থাপনা।
এছাড়া জরিমানার মাধ্যমে আদায় হয়েছে পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। উচ্ছেদকৃত মালামাল নিলামে বিক্রি করে আরও পাঁচ কোটি দুই লাখ ২৬ হাজার টাকা আদায়ের কথা জানান বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক। অভিযানে বাধা দেয়া ও অবৈধভাবে নদী দখলের কারণে ২২ জনকে আসামি করে ছয়টি মামলাও করে সংস্থাটি।