কমিটি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন ছাত্রলীগের ‘বিতর্কিত নেতারা’

বিশেষ প্রতিবেদক

কমিটি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন ছাত্রলীগের ‘বিতর্কিত নেতারা’
ছবি : সংগৃহিত

বিতর্কের মুখে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের দুই মাসের মধ্যে তিনজন দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার আবেদন করেছেন। তবে এরা নিজে থেকেই চলে যাচ্ছেন নাকি তাদেরকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে- এ বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

আজ বুধবার ছাত্রলীগের দায়িত্ব থেকে অব্যহতির খাতায় নাম লেখালেন উপ-পঠাগার সম্পাদক রুশী চৌধুরী। এর আগে ১৮ জুন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার দুই-এক দিন পরই সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন বিন সাত্তার সংগঠন থেকে অব্যাহতি নেন।

গত ৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। এ কমিটিতে বহুজনের নাম আসে, যারা নানা কারণে বিতর্কিত এমনকি ছাত্রলীগের আদর্শ ও দর্শনের সঙ্গেও তাদের যায় না।

কমিটি গঠনের পর পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা আন্দোলনও করেন। পরে অবশ্য আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্বাসে তারা কর্মসূচি থেকে সরে আসে।

আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের দাবি, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিবাহিত, বয়স্ক ও মাদকাসক্তদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই অবস্থায় তিনজনের সরে দাঁড়ানোটি ইঙ্গিতপূর্ণ হিসেবেই দেখছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

পাঠাগার বিষয়ক উপ-সম্পাদকের পদ ছেড়ে দেওয়ার আবেদনে এই সিদ্ধান্তের পেছনে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়েছেন রুশী চৌধুরী। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুমতিক্রমে তিনি অব্যাহতির চিঠি পাঠিয়েছেন।

তবে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের অভিযোগ, রুশী চৌধুরী বিবাহিত এবং এ কারণে তিনি কমিটিতে পদ পাওয়ার অযোগ্য ছিলেন। বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় এখন তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন।

রুশী চৌধুরী অবশ্য গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আগে আমাকে আংটি পরানো হয়েছিল, কিন্তু বিয়ে হয়নি। এ মাসের ৮ তারিখ আমার বিয়ে হয়েছে। আমি এখন সংসার করতে চাই। আর সংসার করলে তো ছাত্রলীগের সব প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারব না। তাই নিজ থেকেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমি এই কমিটি মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাজনীতি করতে পারতাম। কিন্তু পরবর্তী কমিটিতে কোনো পদ প্রত্যাশা করতে পারতাম না। ছাত্রলীগের মঙ্গল কামনা করেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছি।

গত ১৮ জুন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল অব্যহতির চিঠি পাঠান। তিনি নিজের কথা স্বীকার করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, আমার ছাত্রত্ব শেষ এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ করার যে বয়স সেটাও শেষ হয়ে গেছে। তাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে আমার ওপর যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা আমি পালন করতে পারছি না। সে কারণে আমি উক্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা যে ‘বিতর্কিত নেতাদের’ তালিকা করেছিলেন, সেখানে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নামও ছিল।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর পরই সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন বিন সাত্তার নিজের অপারগতা স্বীকার করে ছাত্রলীগের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নিয়েছেন। তিনিও বিতর্কিত তালিকাভুক্ত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১১-১২ মে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই সভাপতির পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম রাব্বানীর নাম ঘোষণা করা হয়।

একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। রীতি অনুযায়ী সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর দ্রুততম সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা। কিন্তু দুই সদস্যের এ কমিটির মেয়াদ প্রায় ১১ মাস পার হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে