উথালপাতাল ঢেউ আর শোঁ শোঁ শব্দ নদীর পাড় কাঁপিয়ে তুলছে তিস্তা। বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। আজ বৃহস্পতিবার জেলার ডিমলা উপজেলায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমর ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে নদীর পানি ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার নদীতীরবর্তী ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চর ও চর বেষ্টিত গ্রামে বসবাসরত পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ওপারে গোজলডোবা তিস্তা ব্যারাজের জলকপাট খুলে দেয়ায় ভারত তাদের অংশে হলুদ সতর্কতা জারি করেছে। এতে করে উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
এদিকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শৌলমারী বানপাড়ায় স্রোতের আঘাতে ডান তীর গ্রামরক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়ায় ওই এলাকার দুই হাজার পরিবার ও ডিমলা উপজেলার চরখরিবাড়ি এলাকার স্বেচ্ছাশ্রম বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। এতে ওই চরে বসবাস করা দুই হাজার পরিবার আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
ডিমলা উপজেলার তিস্তাপাড়ের আছির মাঝি ও হারুন মাঝি জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বুধবার রাত ১১টা থেকে নদীর পানি হু হু করে বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে আশেপাশের গ্রামগুলোতে ঢুকে পড়েছে।
- আরও পড়ুন >> পাকিস্তানে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১৬
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যাপূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। এ সময় বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুর ১২টায় বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপরে চলে যায়। এরপর বিকেল ৩টায় পানি বেড়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার, বিকেল ৬টায় আরও ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।
পাউবো সূত্রে জানায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে প্লাবিত হয় তিস্তা ব্যারাজের উজান ও ভাটির চর ও নদীতীরবর্তী গ্রাম গুলো।
ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা জানান, তিস্তার বন্যায় ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছচাঁপানী, ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারীসহ ১০ ইউনিয়নের তিস্তা অববাহিকার ১৫টি চর ও গ্রাম তিস্তার বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ওই সকল এলাকায় বসবাসকারীদের নিরপদে উঁচু স্থানে সরে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শৌলমারী বানপাড়ায় ডান তীর গ্রামরক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা মনির উদ্দিনের ছেলে আশরাফ আলী ও দিদার রহমান বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে খুবেই ভয়ের মধ্যে আছি। এই বাঁধ ভেঙে শুধু এই বানপাড়া নয়, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের ২০ হাজারেরও বেশি পরিবারের ঘরবাড়ি তিস্তা নদীতে পরিণত হবে। আমরা নিজেরাই বাঁশ ও কাঠ ফেলে বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা করছি।
ছাবেদ আলী ও জহুরুল হক অভিযোগ করে বলেন, বাঁধ ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুল হকের কাছে ভাঙন রোধের জন্য বলা হলে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। কিন্তু মুখে বললেও তারা কাজ করেন না। ফলে আমরা নিজেরাই বাঁশ ও কাঠ ফেলে বাঁধের ভাঙন রোধের চেষ্টা করছি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারী জোনের এসডি হাফিজুল হক জানান, বানপাড়া বাঁধের ৬০ মিটার পর্যন্ত ভাঙন পাওয়া গেছে। আমরা ১২০ মিটার পর্যন্ত এই ভাঙন রোধের চেষ্টা করছি। তবে এ বাঁধটি প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে রক্ষার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে এর কাজ শুরু হবে।
অপরদিকে ডিমলা উপজেলার চরখড়িবাড়ি এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁধটি তিস্তার পানির তোড়ে ভাঙনের মুখে পড়ায় ওই এলাকার দুই হাজার পরিবার আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
বাঁধটি রক্ষার্থে বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ থেকে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক। তিনি ওই বাঁধের ভাঙন রোধে লোকজন নিয়ে কাজ করছেন বলেও জানান।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, উজানের ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে আমরা সর্তক অবস্থায় রয়েছি। বৃহস্পতিবার তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যারাজের সবকটি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।