সীমান্তে হত্যা আগের তুলনায় অনেকটা কমে এসেছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গত ১০ বছরে (২০০৯-২০১৮) সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ২৯৪ জন নিহত হয়েছে।
এরমধ্যে ২০০৯ সালে ৬৬ জন, ২০১০ সালে ৫৫ জন, ২০১১ সালে ২৪ জন, ২০১২ সালে ২৪ জন, ২০১৩ সালে ১৮ জন, ২০১৪ সালে ২৪ জন, ২০১৫ সালে ৩৮ জন, ২০১৬ সালে ২৫ জন, ২০১৭ সালে ১৭ জন এবং ২০১৮ সালে ৩ জন।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান। ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশনে এসংক্রান্ত লিখিত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ।
জবাবে মন্ত্রী আরও জানান, সীমান্তে হত্যা কমে আসছে। ২০০৯ সালে যেখানে হত্যা করা হয়েছিল ৬৬ জন, ২০১৮ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩ জনে। সরকার কূটনৈতিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিএসএফ একমত পোষণ করে আসছে বলেও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিলের প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান জানান, সীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে যেসব স্থানে সমন্বিত টহল কার্যক্রমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা হচ্ছে। এক বিওপি (সীমান্ত ফাঁড়ি) থেকে পার্শ্ববর্তী বিওপির মধ্যবর্তী দূরত্ব কমানোর জন্য ১২৮টি বর্ডার সেন্ট্রি পোস্ট (বিএসপি) নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বিএসএফ সীমান্তের ৩১৮ কিলোমিটার এলাকাকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে আধুনিক ক্যামেরাসহ নজরদারির ব্যবস্থা করছে।
বিএনপির হারুনুর রশীদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ সব সংস্থা ২০১৮ সালে এক লাখ ৬১ হাজার ৩২৩ জন মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এক লাখ ১৯ হাজার ৮৭৮টি মামলা দায়ের করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কর্তৃক কোনও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেনি।
আওয়ামী লীগের দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, গত ১০ বছরে (২০০৯-২০১৮ পর্যন্ত) বিজিবি সীমানায় টহল ও অভিযান চালিয়ে ৬ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকার অন্তর্মুখী মাদক ও চোরাচালান দ্রব্য এবং ৬৯৮ কোটি টাকার বহির্মুখী চোরাচালান দ্রব্য আটক করতে সক্ষম হয়েছে।
এ সময়ে বিজিবি ৫৭টি রিভলবার, ৪৮৩টি পিস্তল, ৪০২টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ৪৪৩ বোতল ফেন্সিডিল, এক লাখ ৫৪ হাজার ১০৯ কেজি গাঁজা, ১৬ লাখ ১১ হাজার ২৪২ বোতল বিদেশি মদ, এক লাখ ৪৩ হাজার ১৮ লিটার দেশি মদ, ৩ লাখ ৫ হাজার ৫৫৯ বোতল বিয়ার, ৩৬৭ কেজি হেরোইন, ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৪০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩ লাখ ৮৫ হাজার ১৫৬টি নেশার ইনজেকশন, ৩ দশমিক ০৭ কেজি আফিম, ৮ দশমিক ০৫৫ কেজি কোকেন আটক করেছে।
এছাড়া অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়ার সময় ৩ হাজার ৮৫৫ জন নারী, এক হাজার ৫৯১টি শিশু উদ্ধার এবং ১০৮ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে।
- আরও পড়ুন >> আদিল রশিদের জোড়া আঘাতে হঠাৎ লণ্ডভণ্ড অস্ট্রেলিয়া
ওয়ার্কার্স পার্টির বেগম লুৎফুন নেসা খানের প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন জানান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের যে মই রয়েছে, তার মাধ্যমে ২০ তলা পর্যন্ত আগুন নেভানো ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব।
সরকারী দলের নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২০০৬ সাল থেকে জুন ২০১৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন অবস্থায় এক হাজার ৫০ জন পুলিশ নিহত ও ৪ হাজার ৪৪০ জন আহত হয়েছেন।
একই দলের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, সরকারের নির্দেশনায় সুন্দরবন এলাকায় ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩২টি বাহিনীর প্রধানসহ ৩২৮ জন জলদস্যু ও বনদস্যু ৪৬২টি অস্ত্র, ২২ হাজার ৫০৪টি গোলাবারুদ ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ র্যবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের নীতি হলো জিরো টলারেন্স। সেখানে পুরুষ হোক বা নারী হোক তাকে নির্মূল করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ সদা তৎপর রয়েছে। তিনি আরো জানান, জঙ্গীবাদ দমনে পুলিশের একটি আদালা ইউনিট এন্টি টেরোরিজম ইউনিট গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও বিএমপিতেও কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ক্রাইম গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ইউনিটে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ দমনে স্পেশাল টাস্ক গ্র“প (এসটিজি) গঠন করা হয়েছে। জঙ্গীবাদ দমনে গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রয়েছে।