জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড আমদানির ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে। আর এমন খবরে দেশীয় উৎপাদকরা শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন।
তারা বলছেন, এটি করা হলে দেশে সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। বেকার হয়ে যাবে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষিত ও সুদক্ষ কয়েক হাজার কর্মী; যাদের বেশির ভাগই নারী। সরকারও প্রতিবছর শতকোটি টাকা রাজস্ব হারাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে শিল্প খাতের নতুন পণ্য হিসেবে কয়েক বছর ধরে উৎপাদন হচ্ছে এটিএম কার্ড, চিপ বেসড ভিসা কার্ড, মাস্টারকার্ডসহ বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল লেনদেনের স্মার্ট কার্ড। মূলত দেশের ব্যাংকগুলোকে এই কার্ড সরবরাহ করে আসছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো।
চাহিদার একটি বড় অংশ দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই পূরণ হচ্ছে। ২০০৭ সালে অনিশ্চয়তা থাকার পরেও বিপুল বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। মোবাইল ফোনের সিমকার্ড তৈরি হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে। বর্তমানে চাহিদার শতভাগ সিমকার্ড দেশীয় এসব প্রতিষ্ঠান থেকেই সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব পণ্যের মান ও নিরাপত্তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
জানা যায়, দেশে ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন ডিজিটাল লেনদেনে প্রায় দেড় কোটি কার্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে এসব কার্ডের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ উৎপাদন করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। বাকি অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।
বর্তমানে বৈশ্বিক পর্যায়ে জনপ্রিয় ও হ্যাকিং প্রতিরোধী চিপ বেসড কার্ড দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই উৎপাদন করছে; যা মাস্টারকার্ড, ভিসা কার্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু তার পরও কিছু ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী বিদেশ থেকেই উচ্চ মূল্যে কার্ড আমদানি করতে বেশি আগ্রহী। এর একটি বড় কারণ আন্ডার ইনভয়েস করে শুল্ক ফাঁকি ও ওভার ইনভয়েস করে অর্থ পাচার।
সম্প্রতি ব্যাংকিং খাতের জন্য আমদানি হওয়া এটিএম, সিডিএম, সিআরএম, আইডিএম, সিএসএম, এসটিএম ও আইডিএমসহ ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রযুক্তি পণ্য সরবরাহকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
ঋণপত্র বা এলসিতে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে চীন, হংকং, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা এটিএম ও সিআরএম মেশিনের ক্রয়মূল্য কম দেখানোর অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৮ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করার জন্য আমদানীকৃত সিমকার্ডের ওপর ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ করায় এ খাতে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহী হয়। উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়ায় সাতটিতে।
পরে এই প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের সব ব্যাংকে ব্যবহৃত সব ধরনের ব্যাংক কার্ড উৎপাদনের জন্য নতুন আঙ্গিকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারখানা স্থাপন করে।
- যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু
- এরশাদের মৃত্যুতে একাধিক পদ নিয়ে বিপাকে জাপা
- এরিকের জন্য জীবন দিতে হলে তাই করব : বিদিশা এরশাদ
এ খাতে সরকার দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে আরো উৎসাহী করতে বর্তমান অর্থবছরের বাজেটে সরকার আমদানীকৃত কার্ডের ওপর ২-২.৫০ ডলার ন্যূনতম মূল্য সংযোজন করে। কম মূল্য দেখিয়ে আমদানি করা কার্ডের শুল্ক ফাঁকি রোধ করার জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এ ছাড়া দেশীয় শিল্পের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে আরো প্রায় এক হাজার পণ্যের ওপর মিনিমাম ভ্যালু নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু কার্ড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আশঙ্কা, এনবিআর আমদানি করা কার্ডের ওপর মিনিমাম ভ্যালু বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
জানা যায়, গুটিকয়েক সুবিধাভোগী আমদানিকারকের চাপের মুখে সরকারের শিল্পবান্ধব সিদ্ধান্তের এই এসআরওটি প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিল্কওয়েজ কার্ড অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেডের এমডি শেখ ফরিদ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, এনবিআর আমদানিকৃত কার্ডের ওপর মিনিমাম ভ্যালু আরোপের এসআরওটি প্রত্যাহার করে নিলে দেশীয় কার্ড উৎপাদকরা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাবে। তেমনি সরকারও প্রতিবছর প্রায় শতকোটি টাকার রাজস্ব হারাবে।