মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ‘বিচারবহির্ভূতভাবে’ হত্যার অভিযোগে দেশটির সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ চার সামরিক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর অর্থ হল, মিয়ানমারের ওই সেনা কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কোনো সম্পত্তি থাকলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তারা কোনো ব্যবসায়িক লেনদেনও করতে পারবে না।
এই চারজন হলেন- মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং, সেনাবাহিনীর উপ প্রধান ভাইস সিনিয়র জেনারেল সো উইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থান ও এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং অং।
মঙ্গলবার এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক বিবৃতিতে বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিপীড়নের জন্য যারা দায়ী, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে কোনো উদ্যোগই বার্মা সরকার নেয়নি, এতে আমরা উদ্বিগ্ন। তাছাড়া বার্মার সেনাবাহিনী সারা দেশেই নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন চালিয়ে যাচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর আসছে।
২০১৭ সালে রাখাইনের ইন দিনে সেনা অভিযানের সময় শিশুসহ ১০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যার পর লাশ পুঁতে ফেলার ঘটনায় সাত সেনা সদস্যকে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল সামরিক আদালতে। কিন্তু সাত মাস না যেতেই তাদের গোপনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং নিজেই ওই সাতজনকে মুক্তির ওই আদেশ দিয়েছিলেন বলে সম্প্রতি তথ্য প্রকাশ করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও।
মঙ্গলবারের বিবৃতিতে তিনি বলেন, রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়ার পরই মিয়ানমারের ওই চার শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল। তাদের কথায় পাওয়া যায় নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ।
গতবছর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ থেকেই রাখাইনের অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটিয়েছে।
গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এবং জ্যেষ্ঠ পাঁচ জেনারেলকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) বা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশও করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন আসার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অস্ট্রেলিয়া সরকার পাঁচ বর্মি জেনারেলের সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়।