নেত্রকোনায় ব্যাগ থেকে শিশুর মাথা উদ্ধারের ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড। এরসঙ্গে ছেলে ধরা কিংবা পদ্মা সেতুতে বলির গুজবের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানিয়েছেন নেত্রকোনার পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী।
নেত্রকোনা পুলিশ সুপার বলেন, ‘নেত্রকোনায় ব্যাগ থেকে শিশুর মাথা উদ্ধারের ঘটনাটি একটি হত্যাকাণ্ড। এটার সঙ্গে ছেলেধরা বা পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে গুজবের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অপরিচিত হলেই সন্দেহ করে কাউকেই মারধর করা যাবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ ধরনের ভুল সিদ্ধান্তে নিজেও অপরাধী হয়ে যেতে পারেন। এলাকা, পাড়া বা মহল্লায় অপরিচিত কাউকে সন্দেহ হলে তার সাথে কথা বলুন, তার পরিচয় সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হোন। তারপরেও কোনো সমস্যা হলে পুলিশক খবর দিন। পুলিশের কাছে সোপার্দ করুন।’
এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলে ধরা নিয়ে যে ভীতি জেলাবাসীর মনে সৃষ্টি হয়েছে তা মন থেকে ঝেরে ফেলার পরামর্শ দিয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) বলেন, নেত্রকোণা শহরের শিশু সজীবের দেহ বিচ্ছিন্ন মাথা কোনো অপরিচিত ব্যক্তির হাতে ছিল না। রবিন ছিল ওই শিশুরই প্রতিবেশী এবং এলাকার চিহ্নিত মাদকাসক্ত যুবক।
- আরও পড়ুন >> বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনায় জামায়াত-শিবির!
যদি গণপিটুনি দিয়ে রবিনকে মেরে ফেলা না হত তবে প্রকৃত ঘটনা পুলিশের মাধ্যমে অথবা সরাসরি তার মুখ থেকে দেশবাসী দ্রুত সময়ে শুনতে পারত। কিন্তু আইন হাতে তুলে নেওয়ায় পুলিশ সেই সুযোগ পায়নি।
অপরাধ যে কেউ করতে পারে আর তার জন্য আইন-আদালত রয়েছে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধীর বিচার হবে আদালতে। কিন্তু আইন কারো নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ নেই।
ধারণা করা হচ্ছে মনের পুরনো কোনো জেদ বা বিকৃত মানসিকতা থেকেই সজীবের সঙ্গে এমন নির্মম ও বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ মাঠে আছে, দ্রুত সময়ের মধ্যেই মূল রহস্য উদঘাটন হবে।
এদিকে মাথা কেটে নেওয়ার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে বিভ্রান্তি বা ভীতি ছড়িয়েছে তা কাটিয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহ্জাহান মিয়াসহ বিভিন্ন স্তরের পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা।
পুলিশ কর্মকর্তা শাহ্জাহান জেলা পুলিশ ছাড়াও নিজের ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে সচেতনতায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। জনগণকে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করছেন।
তিনি জানান, শিশু সজিবের গলা কাটার বিষয়টি শুধুই একটি হত্যাকাণ্ড। এর সঙ্গে ছেলেধরা বা পদ্মাসেতু ‘গুজবের’ কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে ঘটনার পরপরই জেলা ও ময়মনসিংহ রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ওপর মহল থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পেয়ে মাঠে কাজ করছে পুলিশ। সচেতনতা রক্ষায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এস.এম আশরাফুল আলমসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) শহরের পূর্ব কাটলি এলাকার রঈছ উদ্দিনের শিশু সজিবের (৭) দেহ বিচ্ছিন্ন মরদেহ প্রতিবেশী মাদকাসক্ত যুবক রবিনের (২৮) কাছ থেকে উদ্ধার হয়। পরে এ ঘটনায় একই এলাকার বাসিন্দা এখলাছের ছেলে রবিনকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হয়।
এর কিছুক্ষণ পর পূর্ব কাটলি এলাকার কায়কোবাদ নামে এক ব্যক্তির নির্মাণাধীন ভবনের তৃতীয় তলা থেকে শিশু সজীবের মস্তক বিচ্ছিন্ন দেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে শিশু ও যুবকের মরদেহগুলো নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।