সব ব্যাংককেই চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকও রয়েছে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) কাছে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনাদের ব্যাংকের ঋণ এবং মেয়াদি আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার যথাক্রমে ৯ শতাংশ ও ৬ শতাংশের অধিক নির্ধারিত রয়েছে, যা কাঙ্ক্ষিত নয়।’
এই এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। তিনি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান। এই বিএবির উদ্যোগেই গত বছর ঋণ ও আমানতের সুদহার ৯ ও ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। অথচ এখনো তা কার্যকর হয়নি। যদিও এর বিপরীতে ব্যাংক মালিকেরা করপোরেট করহার কমানোসহ কিছু সুবিধা আদায় করে নিয়েছিলেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকও চিঠিতে এ প্রসঙ্গে বলেছে, ৯ ও ৬ শতাংশ সুদের হার কার্যকরে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো তা মানছে না, যা বাঞ্ছনীয় নয়।
এ অবস্থায় পুরো ব্যাংক খাতে সুদহারের বিষয়টি কীভাবে আছে, কোন ব্যাংক কার্যকর করেছে, কোন ব্যাংক করেনি, কেন করেনি, আমানতের সুদ কোন ব্যাংকের কত—এসব নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে আজ রোববার বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
কোন ব্যাংক কত সুদে ঋণ দেয় ও আমানত নেয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে সেই তথ্যও সংগ্রহ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। মে মাসের প্রজ্ঞাপনের পর এই ফাঁকে কী অগ্রগতি হলো, তা জানতে চেয়ে গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে একটি চিঠি পাঠায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
চিঠিতে ৯ শতাংশ সুদ বাস্তবায়নকারী ব্যাংকের তালিকাও চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের তীব্র আর্থিক সংকটের মধ্যেই গত মে মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়ে দেয়, যেসব ব্যাংকঋণের সুদ ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা সরকারি তহবিল পাবে না। সাধারণত সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো তাদের নিজস্ব তহবিলের অর্থ দেশের কোনো ব্যাংক বা সরকার-নির্ধারিত অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (লিজিং কোম্পানি) জমা রাখতে পারে। আজ বৈঠকে এ নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘এটা নিয়মিত বৈঠক। তবে আলোচনা করেও কিছু হবে না। কারণ, বেসরকারি ব্যাংকের মালিকপক্ষ শক্তিশালী গোষ্ঠী। যে যত কথাই বলি না কেন, ওই গোষ্ঠীর চাওয়ার ওপরই নির্ভর করবে সুদের হার ৯ ও ৬ শতাংশ কার্যকর হবে কি না।’
তিনি আরও বলেন, ভুলটা আগেই হয়ে গেছে। বেআইনি না হলেও এক পরিবার থেকে ৪ জনকে ৯ বছর পর্ষদে থাকাসহ কিছু অনৈতিক সুবিধা নিয়ে গেছে বেসরকারি ব্যাংকের মালিকপক্ষ। অর্থাৎ শক্তিশালীদের সরকার আরও শক্তিশালী করেছে। তাই তারা কারও কথাই শোনে না। ফলে কাঙ্ক্ষিত সুদের হারও কার্যকর করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে আমানতের সর্বোচ্চ সুদ বর্তমানে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ঋণের সুদ ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। তিন মাস বা তার বেশি কিন্তু ৬ মাসের কম মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে ২৭টি ব্যাংক ৬ শতাংশ বা তার কমে আমানত নেয়। রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, জনতার পাশাপাশি ৪টি বিদেশি ও ১৭টি বেসরকারি ব্যাংক এ তালিকায় রয়েছে।
অন্যদিকে ক্ষুদ্র শিল্পে মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে এক্সিম ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, বিদেশি ৭ ব্যাংকসহ মোট ৩৫টি ব্যাংক ৯ দশমিক ৫ থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয়। আর ৯ থেকে ১৩ শতাংশ সুদ নেয় রূপালী, এনসিসিসহ ৭টি ব্যাংক। সোনালী, অগ্রণী, জনতাসহ ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয় ১৩টি ব্যাংক।
আবার বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে ৯ দশমিক ৫০ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয় এক্সিম, আইএফআইসি, ঢাকাসহ ২৩টি ব্যাংক। রূপালী, ডাচ্-বাংলাসহ ১৭টি ব্যাংক সুদ নেয় ৯ থেকে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আর অগ্রণী, বেসিক, ইসলামীসহ ১৭টি ব্যাংক সুদ নেয় ৯ শতাংশ পর্যন্ত। ক্ষুদ্র শিল্পে চলতি মূলধনে ৯ দশমিক ৫ থেকে ১৮ শতাংশ সুদ নেয় রূপালী, ঢাকা, এমটিবি, ট্রাস্ট, ইউনিয়নসহ ৩৬টি ব্যাংক।