কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা বা তার বেশি খেলাপি ঋণ আছে এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিবিড় তদারকির মধ্যে আনার নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে সব ব্যাংকে বিশেষ তদারকি সেল গঠন করতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ও খেলাপি ঋণগ্রহীতার সংখ্যা কমিয়ে আনতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে ব্যাংক খাতের এ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ’ সোমবার (২২ জুলাই) এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠিয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারার ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নানা উদ্যোগ নিয়েও খেলাপি ঋণের লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না। এর মূল কারণ বড় ঋণ খেলাপিরা বিভিন্ন চাপ সৃষ্টি করে ফাঁকফোকর দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। তাই এবার খেলাপির বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে আর্থিক খাতের এ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। এখন ১০০ কোটি টাকা বা তার বেশি খেলাপি ঋণ নিবিড় তদারকি করা হবে। পাশাপাশি সব ব্যাংকে বিশেষ তদারকি সেল গঠন করা হবে। এতে তাদের অবস্থা সহজে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। ফলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে তফসিলি ব্যাংকসমূহের অপরাপর সব শ্রেণিকৃত ঋণসহ ১০০ কোটি টাকা এবং তদূর্ধ্ব স্থিতি বিশিষ্ট শ্রেণিকৃত ঋণ হিসাবসমূহ নিবিড় তদারকি একান্ত আবশ্যক। শ্রেণিকৃত ঋণ হিসাব তদারকির নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।
এর মধ্যে সব ব্যাংক সংশ্লিষ্ট উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রধান করে একটি বিশেষ তদারকি সেল গঠন করবে। যারা ১০০ কোটি টাকা বা তার বেশি শ্রেণিকৃত ঋণ হিসাব তদারকি করবে। তদারকি সেল ত্রৈমাসিক বিবরণীতে বর্ণিত শ্রেণিকৃত ঋণ হিসাব আদায় অগ্রগতিসহ যাবতীয় তথ্য স্ব স্ব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে জানাবে। এ ছাড়া ত্রৈমাসিক বিবরণী পরবর্তী মাসের শেষ কর্মদিবসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের টাস্কফোর্স সেলে দাখিল করবে।
এ বিবরণীতে প্রদর্শিত শ্রেণিকৃত ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ কিংবা অন্য কোনো কারণে নিয়মিত বলে গণ্য হলেও নিয়মিত হওয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী ৮টি ত্রৈমাসিক পর্যন্ত তা বিবরণীতে রাখতে হবে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ওই বিবরণীর যথাযথ পর্যালোচনা নিশ্চিত করবে। এ ক্ষেত্রে ঋণের বকেয়া আদায়ের নিমিত্তে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। পরিচালনা পর্ষদ নিয়মিতভাবে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে পর্যালোচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
আগামী অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০১৯ থেকে এপ্রিল-জুন, ২০২০ ত্রৈমাসিক পর্যন্ত ওই বিবরণীর হার্ড ও সফট (এক্সএল সিট) কপি দাখিল করতে হবে। আগামী এপ্রিল-জুন, ২০২০ ত্রৈমাসিক থেকে আলোচ্য বিবরণী বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নেয়ার পরই ঘোষণা দেন খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। এ রকম ঘোষণা সত্ত্বেও গত মার্চ প্রান্তিক শেষে রেকর্ড পরিমাণে খেলাপি ঋণ বেড়ে এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা হয়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজর ৯১১ কোটি টাকা। তিন মাসে বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। এর আগে এক প্রান্তিকে এত বেশি খেলাপি ঋণ বাড়েনি।