মা ছাড়া রাজধানীতে ফিরল ছোট্ট তুবা-মাহি

সারাদেশ ডেস্ক

মা ছাড়া রাজধানীতে ফিরল ছোট্ট তুবা
মা ছাড়া রাজধানীতে ফিরল ছোট্ট তুবা

রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত তাসলিমা বেগম রেনুর দুই শিশু সন্তান মাহি ও তুবা দিন-রাত খুঁজে ফিরছে তাদের মাকে।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে নানা বাড়িতে আসা শত শত লোকের ভিড়ে কয়েকদিন ধরে মাকে খুঁজতে দেখা যায় এ অবুঝ দুই শিশুকে। চার বছরের শিশু কন্যা তুবা তেমন কিছু না বুঝলেও বুধবার ঢাকায় ফেরার আগে মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদেছে তুবার ভাই মাহি। দিনভর কেঁদেই চলেছে সে। 

এই দুই শিশু সন্তানের দায়িত্ব নিতে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করে ৫ দিন ধরে তাদের নানা বাড়িতে আসছেন। এর মধ্যে রয়েছেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলসহ প্রবাসী ও বিত্তবানরা।

এসব মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মাহি ও তুবার স্বজনরা। এর পাশাপাশি আক্ষেপও রয়েছে তাদের। তারা জানিয়েছেন, গুজব ছড়িয়ে এ অবুঝ দুই শিশুর মাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করেছে যে সমাজ, সেখানে তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজেদের কাছে রেখে তাদের মানুষ করবেন তারা।

দুই শিশুর মাঝে তাসলিমা বেগম রেনুর স্মৃতি দেখতে দেখতে তাদের মানুষ করার কথা বলছেন স্বজনরা। 

নিহতের স্বজনদের অনেকেই বলছেন, রেনুর লাশ দাফনের পর থেকে ঘটনা জানতে আসছেন অনেকে। এসব ব্যক্তিদের কথাবার্তায় তাদের মধ্যে স্বজন হারানোর বেদনা বাড়িয়ে তুলছে প্রতিনিয়ত।

পেশাগত ও সাংসারিক কারণে বুধবার নিহত রেনুর বোন এবং তার পরিবারের সদস্যদের ফিরতে হয়েছে ঢাকার উত্তর বাড্ডা এলাকায়। তারা তাদের সঙ্গে মাহি ও তুবাকে নিয়ে গেছেন বলে জানান নিহতের বোন নাজমুন।

সকালে খালা, খালু ও খালাতো ভাই নাসির উদ্দিন টিটুর সঙ্গে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয় এই দুই শিশু। রওনা হওয়ার আগে ১০ বছরের মাহি মনের অজান্তেই যেন খুঁজেছে মাকে। বারবরই সে ছুটে যায় মায়ের কবরের কাছে।

তুবা বারবার বলেছে, ‘মা নিচে গেছে ড্রেস আনতে’। একথা বলে কান্না করেছে সে। এমন দৃশ্য দেখে নিহতের স্বজন ও স্থানীয়দের অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

নিহত রেনুর বড় বোনের স্বামী বদিউজ্জামান জানান, পারিবারিক কলহের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও এখন রেনুর মৃত্যুর পর তার স্বামী তাসলিম হোসেন দুই সন্তান মাহি ও তুবার খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছেন। মাহি ও তুবা কোথায় থাকবে তা তাদের বাবার সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

খালার সাথে মাহি

শিশু তুবার খালাত ভাই নাসির উদ্দিন টিটু সকালে জানান, তাসলিম আল মাহী রায়পুর লামচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে তার ফুফুর বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করছে। তুবা এখন খালাদের সঙ্গে রয়েছে। তাদের নানা বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর সোনাপুর গ্রাম থেকে দু’জনকেই ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, এই মেয়েকে ভর্তির জন্য খোঁজ নিতে তার খালা শনিবার সকালে ঢাকার উত্তর পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে ছেলেধরা গুজব রটিয়ে খালা তাসলিমা বেগম রেনুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

রেনুকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর দেশজুড়ে শুরু হয় নিন্দার ঝড়। দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে সর্বস্তরের মানুষ। তবে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবির কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হক্ষক্ষেপ কামনা করছেন তুবার খালাত ভাই টিটু।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে