‘ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না’

বিশেষ প্রতিবেদক

রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি

দেশে ‘ডেঙ্গুর মহামারি’ চলছে। এ রোগের বিস্তার রোধে সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। গুম-খুন-ধর্ষণ-ক্রসফায়ার-গ্রেপ্তার-নিপীড়নের সঙ্গে সঙ্গে এডিস মশার বিস্তার ঘটিয়ে মানুষ হত্যা করছে মিডনাইট সরকার। ঘরে ঘরে মশার আতঙ্ক সৃষ্টি করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

রিজভী বলেন, দেশে ডেঙ্গুর মহামারি চললেও অন্ধকারে নির্বাচিত এই সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় বসে ডাকাতদের ভূমিকা পালন করছে সরকার। জনগণ বাঁচল না মরল, তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। দেশে ডেঙ্গুর মহামারি, অন্যদিকে ভয়াবহ বন্যায় পানিতে ভাসছে মানুষ। ত্রাণ নেই, সাহায্য নেই, পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা নেই, হাহাকার ও দীর্ঘশ্বাস চলছে দেশজুড়ে।

রিজভী বলেন, গণতন্ত্রহীনতার কারণেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অসহায় মানুষকে সহায়তার দায়দায়িত্ব থাকে না। বর্তমান জবাবদিহিহীন সরকার বন্যা ও ডেঙ্গু জ্বরের মতো এই বিপর্যয়ে ভ্রুক্ষেপহীন ও উদাসীন থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, তাদের স্বাচ্ছন্দ্যে তো কোনো বিঘ্ন ঘটছে না।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, যাদের সামান্য মশা মারার মুরোদ নেই, তাদের আর এক মুহূর্ত ক্ষমতায় দেখতে চায় না জনগণ। ব্যর্থ সরকারকে বলব, এখনই ক্ষমতা ছেড়ে দিন। জোর করে ক্ষমতা দখলে রেখে জনগণকে আর শাস্তি দেবেন না।

রিজভীর আজকের বক্তব্যের বেশির ভাগজুড়েই ছিল ডেঙ্গু প্রসঙ্গ। আর এ রোগের বিস্তার রোধে সরকারের ব্যর্থতার কথাও বলেন বারবার। রিজভী বলেন, দেশে মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গু রোগীতে সয়লাব হাসপাতাল। তিল ধারণের জায়গা নেই। ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, যা আগের রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত গণপিটুনি নিয়ে রিজভীর বক্তব্য, দেশে গণপিটুনির নামে মানুষ হত্যার উৎসব শুরু হয়েছে।

রিজভী বলেন, গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। একের পর এক গলাকাটা লাশের দৃশ্য আমরা সংবাদমাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি। মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। ভয় পাচ্ছে—কখন কাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। কথিত ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে গত কয়েক দিনে আটজন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। চরম নৈরাজ্য চলছে দেশজুড়ে। মানুষের প্রশ্ন—এগুলো কিসের আলামত? সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ।

সম্প্রতি পদ্মা সেতু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের গুজবের জেরে গণপিটুনিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অনেকে। গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, এযাবৎ গণপিটুনিতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত ১৫ জন।

গত সোমবার নেত্রকোনায় এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, গণপিটুনি, ধর্ষণ, বিল্ডিংয়ে আগুন লাগার ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা নয়। এক স্থানে এসব হলে ১০ স্থানে হয়। এসব বিএনপি-জামায়াতের নিখুঁত কাজের উদাহরণ।

আইনমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করেন রিজভী। তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী ব্যর্থতা ঢাকতে গণপিটুনির দায় চাপাচ্ছেন বিরোধী দলের ওপর। আইনমন্ত্রী এই উড়ো-অবান্তর ও উদ্ভট কথা বলছেন ভিন্ন কারণে, বোধ হয় তার মন্ত্রিত্বের পদটি টলমল করছে, তাই প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করে মন্ত্রিত্বের টালমাটাল পদটি ধরে রাখতেই বিরোধী দলের ওপর দায় চাপাচ্ছেন, পীড়াদায়ক আবোল-তাবোল বকছেন।

রিজভী বলেন, জনগণ তো মনে করে ডেঙ্গু জ্বরের প্রসার, বন্যাকবলিত মানুষের আহাজারি এবং রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির দৈন্যদশা ঢাকতেই জনগণের দৃষ্টি সরানোর কৌশল হিসেবেই রক্তপাতের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে