৪ বছরের তুবা এখনও বুঝে উঠতে পারছে না তার মা আর আসবে না। চিরতরে তাকে ছেড়ে চলে গেছে পরপারে।
ছোট্ট এই তুবাকে ভর্তির জন্য বাড্ডার একটি স্কুলে খোঁজ নিতে গিয়েই শনিবার ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তাসলিমা বেগম রেনু (৪০)। রোববার লক্ষ্মীপুরের রায়পুরার সোনাপুর গ্রামে তার দাফন হয়েছে।
তাসলিমা রেখে গেছেন চার বছর বয়সী তুবা ও ১১ বছর বয়সী ছেলে তাহসিনকে। তাহসিন মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি বুঝতে পারলেও নাছোড়বান্দা তুবা। ছোট্ট এই শিশুটি এখনও মায়ের ফিরে আসার প্রতীক্ষায়।
অবশেষে তুবার দায়িত্ব নিয়েছেন তার বাবা রেনুর সাবেক স্বামী তসলিম হোসেন। বুধবার তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। লক্ষ্মীপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে মায়ের স্পর্শ ছাড়াই গতকাল সে ঢাকায় ফিরে।
এ বিষয়ে রেনুর সাবেক স্বামী তসলিম হোসেন বলেন, ঘটনাটি জানার পর আমি নিজেই আসলে হতভম্ব। এ ঘটনা মানুষ কিভাবে করতে পারে এটা আমার বোধগম্য নয়। এতদিন তুবা তার মায়ের কাছে ছিল, এখন তো সে মা হারা। সে আমার বাচ্চা, তার দায়দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে। আমি এমনভাবে তাকে রাখব সে যেন তার মায়ের অভাব কাটিয়ে উঠতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনা ঘটার পর অনেকে আমাকে জড়িয়ে অনেক কথা বলেছে। একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর অনেক গুজব ছড়ায়।
তার সঙ্গে আমার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে ঠিকই, তার সঙ্গে আমার মনের বিচ্ছেদ হয়নি। ৮ বছর সংসার করার পর ২০১৬ সালে তসলিম হোসেনের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাসলিমার। সেই থেকে ১১ বছর বয়সী ছেলে থাকে দাদার বাড়ি নোয়াখালী। আর মেয়ে তুবা থাকত মা তাসলিমা বেগম রেনুর কাছে।
বুধবার দুপুরে মায়ের স্পর্শ না নিয়েই ছোট্ট তুবা রায়পুর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরে গেছে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে।
এদিন ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মাকে দাফনের পর থেকে মায়ের অপেক্ষায় কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে তুবা ও তার ভাই। আত্মীয়দের আদর-সোহাগে কিছুক্ষণের জন্য কান্না থামলেও মায়ের কথা মনে হলেই কেঁদে ওঠে।
প্রতিটি মুহূর্ত মাকে খুঁজে ফেরে তুবার দু’চোখ। এখনও তুবা জানে না তার মা কোথায় আছে। কেমন আছে। কেউ জিজ্ঞাসা করলেই বলছে, মা চকলেট আনতে গেছে।
প্রসঙ্গত শনিবার সকালে বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন তাসলিমা বেগম। তার দুই সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে স্কুলের গেটে কয়েকজন নারী তাসলিমার নাম-পরিচয় জানতে চান। পরে লোকজন তাসলিমাকে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নেন।
কিছুক্ষণের মধ্যে বাইরে কয়েকশ লোক একত্র হয়ে তাসলিমাকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যায়। স্কুলের ফাঁকা জায়গায় এলোপাতাড়ি মারপিট করে গুরুতর জখম করে। পরে উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন তিনি মারা যান।
- ‘গণপিটুনিতে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার ৭০ শতাংশ বিএনপি-জামায়াতের’
- টাস্কফোর্স গঠন হবে চামড়া শিল্পের জন্য
এ ঘটনায় তাসলিমার বোনের ছেলে সৈয়দ নাসিরউদ্দিন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় অজ্ঞাতনামা চারশ থেকে পাঁচশ মানুষকে আসামি করে মামলা করেন।
নিহত তাসলিমার বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে। মহাখালীতে চার বছরের মেয়ে ও মাকে নিয়ে থাকতেন তাসলিমা। দুই বছর আগে স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ১১ বছরের এক ছেলেও আছে নিহত তাসলিমার।