পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা নিজ দেশে না ফিরতে নানা টালবাহানা করছে। তাদের বায়না বেড়েই চলেছে। মিয়ানমার যদি নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে ফেরত নেয় তাহলে তাদের (রোহিঙ্গা) ফেরত যাওয়া উচিত।’
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গাদের ফেরত না যেতে প্ররোচিত করছে বলে অভিযোগ করেন মন্ত্রী।
রোববার রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট : চ্যালেঞ্জ এবং স্থায়ী সমাধান’ বিষয়ক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এমন মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের অনেক পুরনো এবং বিভিন্ন রকম দাবি-দাওয়া আছে। আমরা চাই, তারা মিয়ানমারে ফেরত যাক। সেখানে গিয়ে তাদের যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধান করুক। নিজের ভূমিতে তাদের যেতেই হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তবে ওদের অনেকেই বোঝাচ্ছে যে, তোমরা সবকিছু অর্জন করে যাও। আমি জানি না সেটা সম্ভব কি-না? মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বোঝাচ্ছে, ওখানে অবস্থা অনেক ভালো। যেহেতু সারা পৃথিবীর লোকজন ওখানে তাকিয়ে থাকবে, বিভিন্ন ধরনের অবজার্ভারও থাকবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বাংলাদেশে ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ভোররাতে আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি সংক্ষেপে ‘আরসা’ দেশটির সেনাবাহিনী ও পুলিশের ৩০টি ক্যাম্পে একযোগে হামলা চালায়।
ওই হামলার জবাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়, কমপক্ষে ১০০ রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয় বলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেন। ওই সময় সাত লাখের অধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। যার অধিকাংশই নারী ও শিশু।
এদিকে রোববার বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং সেখানকার রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
গতকাল শনিবারও উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনসহ রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা।
বৈঠকে রোহিঙ্গা নেতারা ‘নাগরিকত্ব ছাড়া মিয়ানমারে ফেরত যাবেন না’ বলে প্রতিনিধি দলকে সাফ জানিয়ে দেন। এদিন প্রতিনিধি দলের কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও রোববার ‘রোহিঙ্গাদের শর্তসাপেক্ষে নাগরিকত্ব দেয়া হবে’ বলে জানান কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসা মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে।
আরও পড়ুন >> দিনাজপুরে ঘুষ গ্রহণকালে দুদকের হাতে প্রকৌশলী দেলোয়ার আটক
সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের মিন্ট থোয়ে বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের শর্তসাপেক্ষে নাগরিকত্ব দিতে প্রস্তুত। ১৯৮২ সালের মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী প্রত্যেককে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। যারা ‘দাদা, মা ও সন্তান’- এই তিনের অবস্থানের প্রমাণ দিতে পারবে তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। একইভাবে যারা ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) অনুযায়ী কাগজপত্র দেখাতে পারবে তাদেরও নাগরিকত্ব দেয়া হবে।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে দুদিনের সফরে আসে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল। শনিবার ও রোববার কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এর রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন তারা।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রোহিঙ্গা সংকট : চ্যালেঞ্জ এবং স্থায়ী সমাধান’ শীর্ষক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখানে আমরা রোহিঙ্গা তিনবেলা খাবার দিচ্ছি, আমরা আমাদের আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ এখন পর্যন্ত ৯৮২ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। আগামীতে এ ধরনের টাকা আসবে না। তাদের ভালোর জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাষানচরে আবাসনের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু তারা সেখানে যেতে রাজি নন।’
তিনি বলেন, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের উসকানি দিচ্ছে, তোমরা যেও না। এসব প্রতিষ্ঠানের লাভ, রোহিঙ্গারা থাকলে তাদের চাকরি থাকে।
আরও পড়ুন >> ঢাবি ছাত্রের চিকিৎসা : প্রমাণ মিলেছে স্কয়ারের ভুতুড়ে বিল আদায়ের
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ইউএনএইচসিআর-কে এজন্য দায়ী করে বলেন, ‘আগে দুই লাখ ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা এসেছিল। সবগুলো চলে যেত যদি রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প করা না হতো। কিন্তু ক্যাম্প করায় কিছু লোকের (ইউএনএইচসিআরসহ অন্যান্য সংস্থা) বছরের পর বছর চাকরি চলছে। এ ধরনের অনেক ইন্টারেস্টেড গ্রুপ আছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এ দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে, যদি কিছু ফয়দা লোটা যায়…। সুতরাং সমস্যা বড় জটিল।’
বাংলাদেশ চেষ্টা করছে জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, ‘চীন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে রাজি হয়েছে। তাদের আরও সমস্যা সেখানে গেলে সমাধান হবে। নিজেদের সরকারের ওপর রোহিঙ্গাদের এত বিশ্বাসের অভাব! যে ই-কার্ড মিয়ানমার দিতে চাইছে সেটা ওই দেশের নাগরিকত্বের অংশ। তারা এখন যে বায়না ধরেছে, তা হলো তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ…। তাদের বিরাট সংখ্যক সন্তান পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা তাদের সবকিছু দিতে পারব না। তাদের সেটা জানা উচিত। কিন্তু তারা যথেষ্ট ধরনের বায়না করতে শুরু করেছে। এমন চলতে থাকলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব…।’
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর আতিকুল ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন ইউএনএইচসিআর- এর সহকারী স্থায়ী প্রতিনিধি এলিস্টার বুলটন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান বেনজির আহমেদ।