মানবপাচার আইনে মামলা ৪৬৬৮, নিষ্পত্তি মাত্র ২৪৫

বিশেষ প্রতিবেদক

মানবপাচার
মানবপাচার। ফাইল ছবি

দেশে এখন পর্যন্ত মানবপাচার আইনে ৪ হাজার ৬৬৮টি মামলা হলেও এর মধ্যে মাত্র ২৪৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি মামলাগুলো পড়েছে দীর্ঘসূত্রিতায়।

জানা যায়, আইনে থাকলেও সাত বছরে এ সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল না গঠন করাই এ দীর্ঘসূত্রিতার জন্য দায়ী। ২০১২ সালের বাংলাদেশের মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়।

রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে সোমবার আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

বিশ্ব মানবপাচার বিরোধী দিবস উপলক্ষে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচি মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন পরিস্থিতি, সমস্যার কারণ এবং উত্তরণ নিয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। ২০১৩ সাল থেকে ৩০ জুলাই বিশ্ব মানবপাচার বিরোধী দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধ আইনটি অত্যন্ত শক্তিশালী। মানবাধিকার কমিশন পর্যালোচনা করে দেখবে কেন সেটি কার্যকর হচ্ছে না। এ বিষয়ে কমিশনের মতামত সরকারকে জানানো হবে।

তিনি বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে মানবপাচার বিষয়ক প্রতিরোধ কমিটিকে কার্যকর করতে হবে। প্রান্তিক পর্যায় থেকে মানুষকে সচেতন করা সম্ভব হলে মানবপাচার অনেকাংশেই কমে আসবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, প্রতি জেলায় আলাদা করে ট্রাইব্যুনাল করা কঠিন। তবে যে সব জেলা থেকে মানবপাচার বেশি হয়েছে সে সব জেলায় ট্রাইব্যুনাল হতে পারে। আইন অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা শেষ না হলে ট্রাইব্যুনাল সেটি উচ্চ আদালতে পাঠাবে।

তিনি বলেন, মানবপাচার এবং অভিবাসন ভিন্ন বিষয়। পৃথিবীর উন্নয়নে অভিবাসন অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু আমাদের দেশে মানবপাচারের ৯০ শতাংশ হয়ে থাকে অবৈধ অভিবাসন কেন্দ্রিক। এসবের মূল কারণ দুর্নীতি। দুর্নীতি আমাদের ছেয়ে ফেলেছে।

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম।

তিনি জানান, চলতি বছরের মে মাসে ভূমধ্যসাগর দিয়ে অনিয়মিতভাবে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে মারা যান ৩৭ বাংলাদেশি। এ এক মাসের মধ্যে ইউরোপে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ভাসতে থাকা ৬৪ বাংলাদেশিকে তিউনিসিয়ার উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়।

কয়েক বছর আগেও সাগরপথে হাজার হাজার মানুষ মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে যাওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যমে ওঠে আসে বাংলাদেশের নাম। মধ্যম আয়ের দেশের পথে এগুতে থাকা বাংলাদেশের জন্য এসব চিত্র অনেক বেশি উদ্বেগের বলে অনুষ্ঠানে উল্লেখ করা হয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. শাহ আলম, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের নিরাপদ অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান নাজিয়া হায়দার প্রমুখ। সমাপনী বক্তব্য দেন ব্র্যাকের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে