‘প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, ভয় পাওয়া চলবে না’

ক্রীড়া ডেস্ক

সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান

‘সফল ক্রিকেটার হতে হলে স্বপ্নটাকে বড় করতে হবে। শুধু স্বপ্ন দেখলে হবে না, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে চালিয়ে যেতে হবে নিরন্তর চেষ্টা। মাঠে প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, ভয় পাওয়া চলবে না। দেশের কথা মাথায় রেখে খেলতে হবে বুক চিতিয়ে।পারফরমেন্সে দিন দিন উন্নতি করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন কঠোর অনুশীলন ও পরিশ্রম। ডিসিপ্লিনে থাকতে হবে। টেনশন করা যাবে না।’

আজ মঙ্গলবার বিকালে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা সিজেকেএস কর্তৃক আয়োজিত বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে দেয়া সংবর্ধনা শেষে মাঠে উপস্থিত খুদে ক্রিকেটারেদের উদ্দেশে সাকিব এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

তিনি বলেন, সফল হতে হলে পড়াশুনার বিকল্প নেই। নিয়মিত পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ ক্রিকেট মেধার খেলা। এখানে টিকতে হবে মেধা দিয়ে। আর শুনতে হবে বাবা-মার কথা। এটাই সাফল্যের মূলমন্ত্র।

সাকিব আল হাসানকে একনজর দেখতে স্টেডিয়ামে বিকাল থেকেই ভিড় জমান ভক্ত-সর্মকরা। তাদের মধ্যে ক্রিকেট প্রশিক্ষণের বিভিন্ন একাডেমি এবং চসিক পরিচালিত বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই ছিল বেশি। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে স্টেডিয়ামে আসেন পাঞ্জাবি পরিহিত সাকিব। ভক্তদের হুড়োহুড়ি আর ব্যান্ড-বাদ্যের তালে তালে প্রবেশ করেন মাঠে।

এ সময় ভক্তদের সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয় পুলিশকে। সংবর্ধিত অতিথিকে তার সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ চট্টগ্রাম নগরীর চাবি তুলে দেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ ছাড়া ক্র্যাস্ট দেয়া হয় সিজেকেএস ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে।

সংবর্ধনার জবাবে দেয়া বক্তব্যে সাকিব বলেন, ‘চট্টগ্রাম আমার প্রিয় শহর। আমার টেস্ট অভিষেক হয়েছিল এখানে। চট্টগ্রামবাসী আমার প্রতি যে ভালোবাসা দেখাল, তাতে আমি মুগ্ধ। আশা করছি, এ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের অন্যান্য বিভাগেও সফল খেলোয়াড়দের এরকম সম্মান দেয়া হবে।’

বক্তব্যের একপর্যায়ে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের কথা বলতে ভুললেন না এই অলরাউন্ডার। জানালেন, মেজবান তার খুবই প্রিয়। চট্টগ্রামে এলে মেজবান খেতে ভুলেন না। ঢাকায়ও তার জন্য মেজবানীর মাংস পাঠান অনেকে।

এরপর খুদে ক্রিকেটারদের পালা। শুরুতেই অবধারিতভাবে এলো সেই প্রশ্নটি- বিশ্বকাপে এত ভালো কীভাবে করলেন। জবাবে সাকিব বলেন, সত্যি কথা বলতে কী, এই বিশ্বকাপের আগে আমার প্রস্তুতি ভালো ছিল। আমি প্রায় তিন-চার মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করি। অনেক পরিশ্রম করেছি। যে জায়গাগুলোতে মনে হয়েছিল চ্যালেঞ্জ ফেস করতে হতে পারে-সেগুলো নিয়ে কাজ করেছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে যে পরিশ্রমটা করেছি সেটা কাজে লেগেছে। সঙ্গে দেশের মানুষের ভালোবাসাও ছিল।

যখন মাঠে থাকেন কী চিন্তা করেন-এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করি। খেলাটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করি। দল যা যা চায়-সেটা দেয়ার চেষ্টা করি। মাথাটাকে পরিষ্কার রাখতে হবে। মাথা যদি পরিষ্কার থাকে তখন কোনো চাপ অনুভব হয় না।

ক্ষুদে মেয়ে ক্রিকেটার সাইমন আকতার দোলার এক প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, এটা সত্যি কথা ছেলেরা বেশি প্রায়োরিটি পায়। কিন্তু ক্রিকেটে মেয়েদের অর্জন কিন্তু অনেক ভালো। তারা এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমরা চারবার খেলেও এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। আমরা যেটা পারিনি, মেয়েরা সেটা করে দেখিয়েছে। তাদের অনেক ক্রেডিট দিতে হয়। অনেক প্রতিকূলতা সত্বেও তারা সাফল্য পাচ্ছে।প্রতি জেলায় মেয়েদের ক্রিকেট খেলাকে সহায়তা করতে হবে। তারা যেন উৎসাহিত হয়।

টাইগারদের শ্রীলঙ্কা সফরে আপনি নেই। দল ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারছে না কেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, একটা পরিবর্তন যখন আসে তখন সবকিছুতেই গুছিয়ে উঠতে একটু সময় লাগে। একটু সময় দিতে হবে। আমরা গত চার-পাঁচ বছর অনেক ভালো ক্রিকেট খেলেছি। সেটা মনে রাখতে হবে। বিশ্বকাপে আমাদের যেমনটি হওয়া উচিত ছিল, তা হয়তো হয়নি। শ্রীলংকাতেও আমাদের রেজাল্ট সেরকম আশানুরূপ আসেনি। তার মানে এই নয় যে, আমরা ক্রিকেটে পিছিয়ে গেলাম। এক পা দুই পা যদি আমরা পেছাই-তা পিছিয়ে যাওয়া হয় না। সামনে আমরা আরও চার-পাঁচ পা এগুবো। সাহসটা রাখতে হবে। ক্রিকেটারদের উৎসাহিত করতে হবে যাতে তারা ভালো খেলতে পারে।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চসিক মেয়র ও সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। আরও বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু হাসান সিদ্দিক, বিসিবির সাবেক পরিচালক সিরাজ উদ্দিন মো.আলমগীর।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে