আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে মালয়েশিয়ায় শুরু হচ্ছে অবৈধদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার (সাধারণ ক্ষমা) ‘ব্যাক ফর গুড’ বা বিফোরজি কর্মসূচি। ১ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচির অধীনে আত্মসমর্পণ করে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি পাওয়ার জন্য অবৈধদের নির্দিষ্ট কিছু নথি সরবরাহ করতে হবে।
কর্মসূচির পরিচালক দাতুক খায়রুল দাজাইমি আবু দাউদ বলেছেন, ‘অভিবাসন বুথে আবেদন করার আগে তাদের নিজ নিজ দূতাবাস থেকে একটি সম্পূর্ণ শনাক্তকরণ কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। সাতদিনের মধ্যে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেয়ার আগে তাদের ফ্লাইট টিকিটসহ আবেদনের সমস্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করা হবে।’
বিফোরজি প্রকল্পের ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র পেনিনসুলার মালয়েশিয়ার অবৈধ অভিবাসীরা এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন। যারা এরই মধ্যে আটক হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এ সুযোগ কার্যকর হবে না।’
অবৈধ অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ হ্রাসের পাশাপাশি দফতর পরিচালনার খরচ এবং অপরাধ সংক্রমের ঝুঁকি হ্রাস করা এ কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য বলেও জানান অভিবাসন মহাপরিচালক। ১ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সুযোগ পাওয়ার পরও যারা মালয়েশিয়ায় অবস্থান করবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থান নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে অবৈধ অভিবাসীদের দেশত্যাগে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলেও অভিবাসন বিভাগের ধরপাকড় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন চলছে এ অভিযান। ৩০ জুলাই অভিবাসন ও সিটি কর্পোরেশন পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হন বাংলাদেশিসহ ৫৬ জন। রাজধানী কুয়ালালামপুরের পার্শ্ববর্তী পাংছাপুরি ,আমপাং জায়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৬ বাংলাদেশিসহ ৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
আমপাং জায়া পুলিশের সহকারী কমিশনার নূর আজমি জানান, অপরাধ দমনে আমপাং জায়ার, বেরেমবাং ইনডাহ, হুলু কেলাংসহ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন দেশের ১১১ জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় বাংলাদেশের ৪৬, পাকিস্তানের ৫, নেপালের ৪ এবং ইন্দোনেশিয়ার একজনকে ইমিগ্রেশন আইনের বিভিন্ন ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা ও দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে, দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত এ কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে অভিবাসন বিভাগকে সহযোগিতা করবে রয়েল মালয়েশিয়া পুলিশ (পিডিআরএম)। বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পূরণ বা সংগ্রহের জন্য দূতাবাস ও অভিবাসন কার্যালয়ে যাওয়ার পথে অবৈধ অভিবাসীদের আটক করা হবে না।
- আরও পড়ুন >> বেড়েছে আওয়ামী লীগের দলীয় আয়
এদিকে অবৈধ অভিবাসীদের দেশত্যাগের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মালয়েশিয়াজুড়ে ৮০টি কাউন্টারে একযোগে কাজ করবেন সংশ্লিষ্টরা। অবৈধ ব্যক্তিদের সরাসরি ইমিগ্রেশন অফিসে উপস্থিত হয়ে আবেদন করতে হবে।
গত ১৮ জুলাই মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তানশ্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, অবৈধ অভিবাসীদের ইমিগ্রেশন আইনের ১৯৫৯/৬৩ পাসপোর্ট আইনের ১৫৫ ও ১৫ (১) সি ৬ (১) সি আওতায় অবস্থানকারীরা এ সুযোগ পাবেন।
এক্ষেত্রে আবেদনকারীর অরজিনাল পাসপোর্ট, যাদের পাসপোর্ট নেই, দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস, মালয় রিংগিত ৭০০ এবং যেকোনো বিমানের কনফার্ম একটি টিকিট দেখাতে হবে। এছাড়া প্রতারণা থেকে সাবধান হতে এবং যেকোনো এজেন্ট বা ভেন্ডরের সঙ্গে টাকা লেনদেন না করার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৮ সালের ৩০ আগস্টে থ্রি-প্লাস ওয়ান প্রকল্পে এক লাখ ৪৮ হাজার ৭৭৪ অভিবাসী নিজ দেশে ফেরত গেছেন বলে অভিবাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর এ প্রতিবেদককে বলেন, ১ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বিফোরজি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণে রাখবে হাইকমিশন। এ কর্মসূচির সুবিধাপ্রাপ্তিদের জন্য হাইকমিশন ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চলছে। যাদের যে তথ্য এবং ডকুমেন্ট প্রয়োজন তা দ্রুত সরবরাহ করার যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যেসব অবৈধ অভিবাসী স্বেচ্ছায় দেশে প্রত্যাবর্তনে আগ্রহী তারা এ কর্মসূচির সুযোগ গ্রহণ করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর।