বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ বর্তমানে তলানিতে রয়েছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ঋণপ্রবৃদ্ধি কমে বিগত ৬ বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের দাবি, ব্যাংক খাতে কোনো তারল্য সংকট নেই।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতে ৮৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) জন্য মুদ্রানীতি (মানিটারি পলিসি স্টেটমেন্ট) ঘোষণাকালে তিনি এ কথা জানান।
ফজলে কবির বলেন, ‘আমানতের বিপরীতে নগদ জমা সংরক্ষণ বা সিআরআর (ক্যাশ রিজার্ভ রিকোয়ারমেন্ট) সংরক্ষণ এবং বিধিবদ্ধ জমা বা এসএলআর (স্টেটিউটরি লিক্যুইডিটি রেশিও) রাখার পর চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকগুলোতে ৮৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। তার মানে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট নেই।’
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে চলতি অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন এ মুদ্রানীতিকে কর্মসংস্থানমুখী, প্রবৃদ্ধি সহায়ক ও সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি বলেছেন গভর্নর।
মূল্যস্ফীতি ৫.৫০ শতাংশ পরিমিত রেখে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত ঋণ প্রবাহের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতি আগের মতো সতর্কভাবে সংকুলানমুখী রয়েছে বলে জানান গভর্নর।
নতুন মুদ্রানীতিতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত লক্ষ্য ঠিক করেছে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। যা গেল অর্থবছরের জুন পর্যন্ত লক্ষ্য ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের (জুলাই-জুন) পর্যন্ত সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রক্ষেপণ ছিল সাড়ে ১৬ শতাংশ। কিন্তু গত জুন শেষে এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ। এটি গত অর্থবছরের ঘোষিত মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম।
- আরও পড়ুন >> বেড়েছে আওয়ামী লীগের দলীয় আয়
মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নর এস এম মুনিরুজ্জামান, আহমেদ জামাল, পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমী, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিআইএফইউ) প্রধান আবু হেনা মো. রাজি হাসান, ব্যাংকিং রিফর্ম অ্যাডভাইজার এস ক সুর চৌধুরী, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মো. আখতারুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি বছর দু’বার মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে। ছয় মাস অন্তর এই মুদ্রানীতি একটি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই মাসে এবং অন্যটি জানুয়ারি মাসে প্রণয়ন করা হয়। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে পরবর্তী ছয় মাসে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রার সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করতে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।