২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ২ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা

মত ও পথ প্রতিবেদক

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
ফাইল ছবি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়া জানিয়েছেন সদ্যসমাপ্ত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংস্থাটি ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৯২ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে।

আজ বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবন সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আয় কম হয়েছে। মূলত বড় বড় প্রকল্প চালুর কারণে বিভিন্ন খাতে ভ্যাট অব্যাহতি, বেশ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে শুল্ক অব্যাহতি ও আয়করের ক্ষেত্রেও সরকার নির্ধারিত বিভিন্নখাতে অব্যাহতি দেওয়ায় রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো যায়নি।’

গত অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৯২ কোটি। যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা।

তিনি জানান, বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের মধ্যে আয়কর থেকে এসেছে ৭২ হাজার ৮৯৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা মোট রাজস্বের ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ। ভ্যাট থেকে ৮৭ হাজার ৬১০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণ হয়েছে, যা মোট রাজস্বের ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া কাস্টমস থেকে এসেছে ৬৩ হাজার ৩৮২ কোটি ১৬ লাখ টাকার রাজস্ব, যা এনবিআরের মোট রাজস্ব আয়ের ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ।

লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আয় কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভ্যাটের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু খাত যেমন গ্যাস, ইন্টারনেট, রফতানিমুখী পোশাক শিল্প, সোলার মডিউল, ট্রাভেল এজেন্ট, বেবী লোশন, হাওয়াই চপ্পল ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশে প্রায় ১৫ হাজার ১৯২ কোটি ৬ লাখ টাকার ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কাস্টমসের ক্ষেত্রে মূলধনী যন্ত্রপাতি, ব্যাগেজ রুলস, মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারিং, রিলিফ গুডস, শিপ, বেজা ও কূটনৈতিক মিশনে প্রায় ১ হাজার ৫০২ কোটি টাকার আমদানি শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে রাজস্ব আয়ের বড় একটি অংশ অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় চলতি অর্থবছরে প্রত্যাশিত বা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নতুন ভ্যাট আইন জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। নতুন আইন বাস্তবায়ন হওয়ায় ভ্যাট আদায় বাড়বে। এজন্য ইএফডি ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ইএফডি ক্রয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’ আগামী ২ বছরের মধ্যে ১০ লাখ ইএফডি বসানো হবে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘এর পাশাপাশি বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য ফাঁকিবাজ বন্ড প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে ভ্যাট ও শুল্ক ফাঁকি রোধে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রেখেছি। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এনবিআরের ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ২০১৯ সালের মধ্যে ৬ লাখ ৭২ হাজার নতুন করদাতাকে করজালের আনার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ২১৩টি জরিপ টিম গঠন করা হয়েছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬৫টি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। প্রাপ্ত জরিপের ভিত্তিতে ৩ লাখ ৩১ হাজার ২৭২ টিআইএন বরাদ্দ করে আয়কর নির্ধারণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’

এ সময় জরিপ কার্যক্রমের মাধ্যমে কর মামলা নিষ্পত্তি করে ২৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭ হাজার ১০৪ টাকা কর রাজস্ব আয় হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে