ভারতের লোকসভায় বিল পাস, ২ ভাগ হয়ে গেল কাশ্মীর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

দুই ভাগ হয়ে গেল কাশ্মীর
ছবি : সংগৃহিত

ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার পর নিম্নকক্ষ লোকসভায়ও দেশটির সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল-সংক্রান্ত প্রস্তাবটি ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পাস হয়েছে।

রাজধানী নয়াদিল্লিভিত্তিক ভারতীয় টেলিভিশন এনডিটিভি অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি প্রস্তাবটি লোকসভায় উত্থাপন করেন। ৫৪৩ সদস্যবিশিষ্ট লোকসভায় ৩৬৬-৬৬ ভোটে তা পাস হয়েছে।

বিলটি লোকসভায় পাসের সময় গতকালের মতো বেশ কয়েকটি বিরোধী দল ওয়াকআউট করে।

খবরে বলা হয়, লোকসভায় পাসের পর এখন দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হবে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ। জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন সংক্রান্ত বিল রাজ্যসভায় পাস হওয়ার একদিন পরই লোকসভায় পাস হয় বিলটি।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ প্রস্তাবটি লোকসভায় উত্থাপন করেন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ প্রস্তাবটি লোকসভায় উত্থাপন করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে জানান, জম্মু ও কাশ্মীরকে ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হবে। একটি হবে বিধানসভাযুক্ত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর, অপরটি হবে বিধানসভাবিহীন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সীমান্ত সন্ত্রাসের কারণে সৃষ্টি হওয়া নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণেই জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

এর আগে সোমবার সকালে ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রস্তাব করেন। সংসদের অনুমোদনের পরই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন।

রাষ্ট্রপতির সইয়ের সঙ্গে সঙ্গেই কাশ্মীরকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেয়া ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত হলো। সেই সঙ্গে একটি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের মর্যাদাও হারাল কাশ্মীর।

আইনটি পাস করার আগে থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করে রেখেছিল ভারত সরকার। পরে তাদের সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয়।

গতকাল রাজ্যসভায় জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে ওই বিল ও প্রস্তাব তোলা হলে তাতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটকে সমর্থন দেয় বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি), বিজু জনতা দল (বিজেডি), তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস), আম আদমি পার্টি (এএপি) এবং এআইএডিএমকে। তবে জোটসঙ্গী জনতা দল (ইউনাইটেড) তাতে সমর্থন দেয়নি।

কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির বিতর্কিত আইনটির শুরু থেকেই সমালোচনা করছে প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সমাজবাদি পার্টি, ডিএমকে, লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি এবং বামদলগুলো।

ভারতীয় সংবিধানের ৩৫-ক ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরের বাসিন্দা নয় এমন ভারতীয়দের সম্পদের মালিক হওয়া এবং চাকরি পাওয়ায় বাধা ছিল।

কাশ্মীর
কাশ্মীর

৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীরের এমন এক স্বায়ত্তশাসন রয়েছে যা ১৯৪৭ সালের পর দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশের রাজ্য পায়নি।

অনুচ্ছেদ ৩৭০ ভারতীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরকে নিজেদের সংবিধান এবং একটি আলাদা পতাকার স্বাধীনতা দিয়েছে। এ ছাড়া পররাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়াদি, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ বাদে অন্য সব ক্ষেত্রে স্বাধীনতার নিশ্চয়তাও দিয়েছে।

সংসদে ক্ষমতাসীন জোট সোমবার ধারা দুটি বাতিলের যে বিল উত্থাপন করে তা পাস হওয়ায় কাশ্মীরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দশা এখন ফিলিস্তিন কিংবা মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মতো হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে