মসজিদের ইমামখানায় ইমামের শিশু ধর্ষণ, ধর্ষক গ্রেফতার

ডেস্ক রিপোর্ট

ইমামখানায় ইমামের শিশু ধর্ষণ
ধর্ষক মো. ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলাম

বোরকা পরা এক ব্যক্তি সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় র‌্যাব ১১ এর কার্যালয়ে এসে অভিযোগ করেন, তার মেয়ে বর্তমানে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে এবং মসজিদের ইমাম কর্তৃক ধর্ষিতা।

তিনি বলেন, ধর্ষণের পর ইমামের অনুসারীরা আমার মেয়েকে ও আমাকে মেরে ফেলার জন্য বার বার হাসপাতালে গিয়ে খুঁজছে।

universel cardiac hospital

ঘটনা শোনার পর তাৎক্ষণিক র‌্যাব ১১ এর একটি অভিযানিক দল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনের নেতৃত্বে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যায়। ভিকটিম ও তার পরিবারের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পেয়ে হাসপাতালে তাদের নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করে।

এরপর আভিযানিক দলটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ধর্ষককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা শুরু করে এবং আজ বুধবার সকাল ৬টায় নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন উত্তর চাষাড়া চাঁনমারী এলাকা থেকে ধর্ষক মো. ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলামকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে। তার পিতার নাম মৃত রিয়াজ উদ্দিন। বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার সরাপাড়ায়।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার শিশুটির বয়স ৮ বছর। সে মাদরাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। শিশুটি রাতের বেলায় বিভিন্ন প্রকার দুঃস্বপ্ন দেখে কান্নাকাটি করত। বিভিন্ন প্রকার কবিরাজি চিকিৎসা করে ভালো না হওয়ায় ভিকটিমের বাবা জানতে পারে যে, অভিযুক্ত মো. ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবৎ ঝাড়ফুঁক ও পানিপড়া দেয়।

এরই প্রেক্ষিতে ভিকটিমের বাবা ভিকটিমকে এর আগে দুই থেকে তিনবার ধর্ষক ফজলুর রহমানের কাছে ঝাড়ফুঁক পড়িয়ে নেয়। তারপরও তেমন উপকার না হওয়ায় ধর্ষক ফজলুর রহমান ভিকটিমের বাসায় গিয়ে ‘বাড়িবন্দি’ নামক ‘চিকিৎসা’ করে আসে।

জানা যায়, ঘটনার আগের দিন মাগরিবের সময় ভিকটিমের বাবা ধর্ষক ফজলুর রহমানকে ফোন দিয়ে মেয়ের চিকিৎসার ব্যাপারে আসাতে চাইলে সে পরের দিন ফজরের আজানের সাথে সাথে মসজিদে আসতে বলে। কথা অনুযায়ী পরের দিন সকালে ভিকটিমের বাবা মেয়ে শিশুটিকে নিয়ে মসজিদে যায়। ফজরের নামাজের পর ধর্ষক শিশুটি ও তার বাবাকে নিয়ে মসজিদের তৃতীয় তলায় ইমামের শোবার ঘরে নিয়ে যায়।

এরপর হালকা ঝাড়ফুঁক করে পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমের বাবাকে ভোর ৫টা ২০ এ এক প্যাকেট আগরবাতি ও একটি মোমবাতি আনার জন্য বাইরে পাঠায়। ওই সময় দোকানপাট খোলা না থাকায় শিশুটির বাবা কোনোভাবেই মোমবাতি ও আগরবাতি কিনতে পারছিলেন না।

এর মধ্যে সময়ক্ষেপণ করার জন্য ধর্ষক ফজলুর রহমান শিশুটির বাবাকে ফোন করে ১টি পান আনতে বলে ও মসজিদের মোয়াজ্জিনকে ফোন করে নিচের গেটে তালা লাগানোর নির্দেশ দেয়।

ভিকটিমের বাবা ফিরে আসতে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় নেয়। এর মাঝে শিশুটির দুই হাত পেছনে বেঁধে ও মুখে টেপ মেরে নির্মমভাবে পাশবিক নির্যাতন করে তার ‘কামলিপ্সা’ চরিতার্থ করে এবং প্রমাণ লোপাটের জন্য মসজিদের ছাদে নিয়ে শিশুটিকে পানি দিয়ে ধুয়ে দেয়। এরপরে শিশুটির গলায় ছুরি ধরে তার বাবা-মাকে না বলার হুমকি দেয় এবং বললে জবাই করে ফেলবে বলে হুঁশিয়ার করে। শিশুটি অসুস্থ হয়ে গেলে তাড়াহুড়া করে তার বাবাকে বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় করে দেয়।

এর পর শিশুটি বাসায় গিয়ে তার বাবা-মাকে সবকিছু খুলে বললে এবং ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়া শুরু করলে ভূক্তভোগী পরিবারটি শিশুটিকে নিয়ে মসজিদে এসে বিচার দিলে মসজিদ কমিটির কিছুসংখ্যক লোক ও আশপাশের ধর্ষকের কিছু ভক্ত মিলে সেখানেও শিশু ও পরিবারটিকে মারাত্মক হেনস্তা করে।

ধর্ষক ফজলুর রহমান তার অনুসারীদের দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যে, ভুক্তভোগী পরিবারটি যেন থানা বা হাসপাতালে যেতে না পারে। এরপর শিশুটির অবস্থা আরও খারাপ হলে শিশুটিকে নিয়ে পরিবারটি নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চুপি চুপি ভর্তি করে।

ধর্ষক ফজলুর রহমান ও তার অনুসারীরা শিশুটিকে হত্যা ও অপহরণ করার উদ্দেশ্যে কয়েক দফায় চেষ্টা চালায়। ধর্ষকের অনুসারীরা হাসপাতালে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যে শিশুটিকে লুকিয়ে রেখে বাবা-মা দীর্ঘসময় হাসপাতালের টয়লেট ও বেডের নিচে লুকিয়ে থাকে। এরই একপর্যায়ে শিশুটির বাবা হাসপাতালের নার্সের বোরকা পরে র‌্যাব অফিসে এসে অভিযোগ দেয়।

শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা, অপহরণচেষ্টা ও পরিকল্পনার সাথে যুক্ত থাকার অপরাধে ধর্ষকের অনুসারী মো. রমজান আলী, মো. গিয়াস উদ্দিন, হাবিব এ এলাহী ওরফে হবি, মো. মোতাহার হোসেন ও মো. শরিফ হোসেনকে ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে