ভারতীয় সান্ধ্য আইনে রুদ্ধ হয়ে পড়া কাশ্মীরে মৃতের জন্য শোকপ্রকাশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শ্রীনগরে যখন তার বাবা হঠাৎ করে মারা যান, ইরফান আহমাদ ভাটের দুঃখও সামরিক অচলাবস্থার মধ্যে হারিয়ে গেছে।
যোগাযোগ বন্ধ থাকায় পরিবার সদস্যরা যেমন মৃতের জানাজায় অংশ নিতে পারেননি, তেমনি তিনি যে মারা গেছেন, তা বহু লোককে জানানো সম্ভব হয়নি।
ভাট বলেন, আমার সবচেয়ে বড় কষ্ট হচ্ছে যে আমার বাবার ঘনিষ্ঠ স্বজনরা কবরে নেয়ার আগে তার মুখটা শেষ বারের মতো দেখতে পারেননি। এমনকি তার জানাজায়ও আসতে পারেননি।
গত এক সপ্তাহ ধরে শ্রীনগরে ইন্টারনেট ও ফোন অকার্যকর। শহরটির ১৫ লাখ লোক ঘর থেকেই বের হতে পারছেন না।
নয়াদিল্লির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার সোমবার মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলটির সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসেনর মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে। সেখানে লাখ লাখ সেনা মোতায়েন করে কাশ্মীরে যোগাযোগ অচল করে রেখেছে।
কাজেই বিধিনিষেধ এতটাই কঠোর যে ইরফান আহমেদ তার পরিবারের কেবল চার সদস্যকে বাবার মৃত্যুর খবর দিতে পেরেছেন।
এএফপির সঙ্গে তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখন তার দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছিল। তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের জানাতে গেলে জানাজার সময় চলে যাবে। কারণ আমি জানি না, এই অবরুদ্ধ অবস্থায় কতটা সময়ের মধ্যে সবার কাছে এই খবর পৌঁছাতে পারবো।
কাশ্মীরিরা শোক করেই আসছেন। গত তিন দশকের বিদ্রোহে অঞ্চলটিতে হাজার হাজার লোক নিহত হয়েছেন। কাজেই তারা শোকে অভ্যস্ত।
কিন্তু জানাজা ও দাফনের মৌলিক কাজগুলো করতে না পারার মধ্য দিয়ে সেখানকার চলমান অচলাবস্থার বাস্তবচিত্রই ফুটে উঠেছে। শ্রীনগরজুড়ে রেজর তারের কুণ্ডলী, ব্যারিকেডস ও তল্লাশি চৌকিতে রাস্তা বন্ধ। শহরের কানাগলিগুলো দিয়েও ঠিকমতো চলাচল করা যাচ্ছে না।
লোকজন কেবল একা কিংবা দুজন একসঙ্গে হাঁটতে পারছেন। শ্রীনগরের ওল্ড টাউনের ফাতেহখাদালে মৃতের বাড়িতে বসে আছেন মঞ্জুর আহমেদ। তিনি বলেন, যে রাতে তিনি মারা গেছেন, সে রাতে কয়েক মাইল হেঁটে তার দুজন স্বজনকে খবর দিতে পেরেছি। এটা খুবই আতঙ্কজনক।
- ৪১ হাজার ছাড়াল ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী
- অস্ট্রেলিয়াকে পেছনে ফেলে টি-টোয়েন্টিতে থাইল্যান্ডের বিশ্বরেকর্ড
ভাটের মামা মোহাম্মদ সিদ্দিক বলেন, কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন কাশ্মীরিরা।
ইরফান আহমেদের স্বজন ওমর ভাট বলেন, যখন কেউ মৃতের খবর দিয়েছে, তখন খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। শেষ রাতে কেউ একজন দরজার কড়া নাড়ছেন বলে শুনতে পেলাম। আমার নাম ধরে ডাকছিল। আমি খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। ভাবছিলাম, পুলিশ আমাকে তুলে নিয়ে যেতে এসেছে। পড়ে দেখি পুলিশ না, আমার একজন স্বজন মৃত্যুর খবর নিয়ে এসেছেন।
তাদের বাড়ির পাশেই বুলেটনিরোধক জ্যাকেট পরে রেজর তারের কুণ্ডলীর কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেনারা। তিনি বলেন, আমরা এখন কি করতে পারি? পুরো এলাকা এখন রেজর তার দিয়ে ঘেরা।