গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় ঘরের ড্রেসিং টেবিলের বক্সের ভেতর থেকে পলিথিনে মোড়ানো এক নারীর দেহের পাঁচ খণ্ড উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার বিকেলে শ্রীপুর উপজেলার আসপাডা মোড় এলাকা থেকে খণ্ডিত এ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া দেহের খণ্ডিত অংশগুলো নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা কেউ কেউ পচে গলে যাওয়া দেহের অংশকে কোরবানির গোশত বলে প্রচার করতে থাকে। এ অবস্থায় খণ্ডিত টুকরোগুলো মানুষের কিনা তা নিশ্চিত হতে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে পরীক্ষার পর মানবদেহের খণ্ডিত অংশ বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। মঙ্গলবার দুপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে খণ্ডিত অংশগুলো পরীক্ষা করা হয়।
শ্রীপুর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রাজীব কুমার সাহা বলেন, মানবদেহের খণ্ডিত অংশগুলো ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার নিজাম উদ্দিনের মেয়ে সুমি আক্তারের (২৩) বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সুমি শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা এলাকার সাবলাইম গ্রিনটেক নামের পোশাক কারখানার অপারেটর ছিলেন। স্বামী মো. মামুনের (৩৫) সঙ্গে আসপাডা মোড় এলাকার নাইম উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সুমি।
এসআই রাজীব কুমার বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। এটি ছিল উভয়ের দ্বিতীয় বিয়ে। স্বামী ওই এলাকায় ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করেন। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল। সুমির ছোট বোন বৃষ্টি একই কারখানায় চাকরি করেন। বৃষ্টি একই এলাকায় অন্য বাড়িতে ভাড়া থাকেন। বৃহস্পতিবার কারখানায় ঈদের ছুটি হয়ে যায়। শুক্রবার তাদের একসঙ্গে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। সুমি কারখানা থেকে ঈদ বোনাস ও বেতন ৩০ হাজার টাকা পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গিয়ে টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য ওই টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সুমির। শুক্রবার সকালে বাড়ি যাওয়ার সময় সুমিকে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করেও না পেয়ে বৃষ্টি ও তার স্বামী নবী হোসেন গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তারা বাড়ি পৌঁছে একাধিকবার বড় বোন ও ভগ্নিপতির মোবাইলে যোগাযোগ করে ফোন নম্বর বন্ধ পান।
বৃষ্টির বরাত দিয়ে এসআই রাজীব কুমার বলেন, শনিবার বৃষ্টি ও তার স্বামী আসপাডা মোড় এলাকায় বোনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানে কাউকে না পেয়ে ঘরের দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। বাসায় কাউকে না পেয়ে ফিরে যান তারা। ফেরার পথে আসপাড়া মোড় এলাকায় মামুনের সন্ধান পান এবং তাকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দেন তারা।
একপর্যায়ে মামুন তাদের বাসায় যেতে বলে কৌশলে পালিয়ে যান। এখন পর্যন্ত মামুন পলাতক রয়েছেন। এরপর বৃষ্টি ও তার স্বামী গ্রামের বাড়ি ফিরে যান। বাড়ি গিয়ে বোনকে না পেয়ে আবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু বোন-ভগ্নিপতির সন্ধান পাননি বৃষ্টি। ঈদের দিন সোমবার বিকেলে স্বামীকে নিয়ে বৃষ্টি আবার আসপাডা মোড় এলাকায় সুমির ভাড়া বাসায় যান এবং ঘরের ভেতরে ঢোকেন। একপর্যায়ে ঘরে থাকা ড্রেসিং টেবিলের নিচ থেকে মেঝেতে রক্তাক্ত পানি গড়াতে দেখতে পান তারা। সেই সঙ্গে ঘরের ভেতর দুর্গন্ধ ছড়ায়।
এ অবস্থায় সোমবার রাত ৮টার দিকে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে চার পলিথিনে মোড়ানো মানবদেহের পাঁচটি টুকরা দেখতে পান তারা। তবে সেখানে তার মাথা, হাত-পা ছিল না। বিষয়টি তারা শ্রীপুর থানা পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে পেয়ে সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে খণ্ডিত টুকরাগুলো উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, পলিথিনে থাকা খণ্ডিত মাংস মানুষের। এতে মানুষের চামড়া ও নারী দেহের খণ্ডিত মাংস বলে আলামত পাওয়া গেছে। তবে সেখানে মাথা, হাত-পা ছিল না।