বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কাল ছিল ত্যাগের মহিমায় উৎকীর্ণ কোরবানির ঈদ, পবিত্র ঈদুল আজহা। রাতের অন্ধকারে একদিকে ঈদযাত্রায় সীমাহীন পথের দুর্ভোগ, সারাদেশে ডেঙ্গু মহামারি এবং দেশের বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে ত্রাণবঞ্চিত বন্যার্ত মানুষের হাহাকার, অন্যদিকে গ্রামীণ জনপদে সরকারি দলের ক্যাডারদের অত্যাচার সব আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে। সড়ক এবং রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার কারণে বহু মানুষকে পথে-ঘাটে ঈদ করতে হয়েছে। স্বস্তি ছিল না ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রায়।
আজ মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
‘সরকারের কতিপয় মন্ত্রী এই ঈদযাত্রায় মানুষের সীমাহীন কষ্ট ও মহাদুর্ভোগ নিয়ে রীতিমতো কদর্য উপহাস করেছে’-উল্লেখ করে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘এরপরও মন্ত্রী সাফাই গাচ্ছেন নিজের সাফল্যের, এই রকম নির্লজ্জতা দেশবাসী আগে কখনও দেখেনি।‘
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যতদিন আপনি সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রী আছেন প্রতিটি ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের নাকের পানি চোখের পানি এক করে ছাড়ছেন। একজন কবির কবিতার বইয়ের নাম ‘সব কিছু ভেঙে পড়ে’- এই সরকারের কল্যাণে এখন সব কিছু ভেঙে পড়েছে। দয়া করে জনগণকে এবার নিস্তার দিন।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এদেশের জনগণের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবৈধ কারাবন্দিত্বের আজ ৫৫২তম কালিমালিপ্ত দিবস। গতকাল ঈদের দিন তার পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তার জীবন এখন সংকটময় অবস্থায় উপনীত হয়েছে। কারাগারে নেয়ার সময় সম্পূর্ণ সুস্থ নেত্রী এখন হুইল চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারছেন না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে গেছে। দেশনেত্রীর ওপর ইনসুলিনের কার্যকারিতা অনেক কমে গেছে।’
রিজভী বলেন, ‘দেশবাসী দেশনেত্রীর প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত তার মুক্তি চায়। মুক্তি না দিলে জনগণ আর বসে থাকবে না। সরকারি ষড়যন্ত্র তছনছ করে দেবে।’
- আরও পড়ুন >> যমুনায় নৌকাডুবিতে দুই নারীর মৃত্যু
এবার কোরবানিতে পশুর চামড়ার দাম কম হওয়ায় তারও সমালোচনা করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘কোরবানির পশুর চামড়ার টাকা গরিব, মিসকিন, এতিমদের হক। এই চামড়া বিক্রির টাকা তাদের মাঝেই বিতরণ করার নিয়ম। এটা তাদের ঈদের আনন্দের একটা উৎস। বিএনপি সরকারের সময়ে এদেশে যে চামড়া কয়েক হাজার টাকায় বিক্রি হতো এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২০০-৩০০ টাকায়। ৮০ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়ার দাম এখন ২২০ টাকা। এক লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২২৫ টাকায়। সব জিনিসের দাম হু হু করে বাড়লেও দফায় দফায় কমতে কমতে দশ ভাগের এক ভাগে নেমেছে গবির-মিসকিনের হক এই কাঁচা চামড়ার দাম।’
তিনি বলেন, ‘এমন করুণ অবস্থা দেখে, নীরব প্রতিবাদ হিসেবে সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি না করে কোরবানির চামড়া মাটির নিচে পুঁতে রাখছেন অনেকে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার অজুহাতে অনির্বাচিত আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট চামড়া নিয়ে এ কারসাজি করছে বেশ কয়েক বছর ধরে। এই চক্রের স্বার্থ রক্ষা করছে নিশুতি সরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়ার বর্গফুট প্রতি একটা হাস্যকর দাম বেধে দিয়ে তাদেরকে সহায়তা করছে। এই অল্প দামের কারণে চামড়া ব্যাপকভাবে পাচার হচ্ছে পার্শবর্তী দেশ। সিন্ডিকেট করে এতিমের হক মারার এ কাণ্ড-কারখানা যারা চালাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে, তারাও নিজেদের ধার্মিক বলে প্রচার করে। এদের হোতা সরকারি দলের এক বড় নেতা।’
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘যেভাবে পাটশিল্প ধ্বংস করা হয়েছে ঠিক সেই পথেই ধ্বংস করা হচ্ছে বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্প। প্রশ্ন করবার কেউ নাই। জবাব দেয়ার কেউ নাই। সুইস ব্যাংকে আর কত টাকা পাঠানো সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের জনগণ মুক্তি পাবে! আজ সুষ্ঠু নির্বাচনকে দূরে ঠেলে জনগণের সরকার নেই বলেই এভাবে জনগণের সর্বনাশ করা হচ্ছে।’