ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আড়তদাররা। তবে এ সিদ্ধান্তে ট্যানারি মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী।
মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকার কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নির্ধারিত মূল্যে কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে না। এ বিষয়ে চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল হতে বলা হয়।
একই সঙ্গে কাঁচা চামড়ার গুণাগুণ যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য স্থানীয়ভাবে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চামড়া সংরক্ষণের জন্য ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাঁচা চামড়া আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সেক্রেটারি হাজী মো. টিপু সুলতান বলেন, কাঁচা চামড়া রফতানির জন্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটাকে আমরা স্বাগত জানায়। এর ফলে সরাসরি চামড়া রফতানি হবে। সেই সঙ্গে বৈধ পথে সরকারের রফতানি আয় বাড়বে।
তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকরা আমাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করেনি। টাকা আটকে রেখেছে। টাকার অভাবে আমরা কোরবানির চামড়া কিনতে পারছি না। এ কারণে কোরবানির চামড়ার দাম পড়ে গেছে। তাই আমি বলবো সরকার সঠিক সময়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
- আরও পড়ুন >>
এদিকে কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতি বলছেন ট্যানারি মালিকরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। এটি বাস্তবায়ন হলে ট্যানারি শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ ট্যানারিগুলোর মূল কাচামাল কাচা চামড়া। এটি রফতানি হলে ট্যানারি কী করবে?
আড়তদাররা কোরবানির পশুর চামড়া পরিকল্পিতভাবে দাম কমিয়ে এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে- এমন অভিযোগ করে ট্যানারির এ মালিক বলেন, আমরা এখনো কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করিনি। মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ কিনেছি। বাকি লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া আরও ১৫ থেকে ২০ দিন পর আড়তদারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করবো। তারা এখন কম দামে চামড়া কিনেছে। কিন্তু আমাদের কাছ কম দামে বিক্রি করবে না। ট্যানারি থেকে তারা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম নিবে। তাহলে চামড়ার এ লাভ কার পকেটে যাচ্ছে?
তিনি বলেন, এটি ভেবে-চিন্তে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ গত কয়েক বছর সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে আমাদের উৎপাদন রফতানি কমে গেছে। এখন সাভারে ২৫৪টি ট্যানারি প্রস্তত হয়েছে। আমাদের অনেক বিনিয়োগ পড়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে কাঁচা চামড়া রফতানির মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিলে ধ্বংস হয়ে যাবে বলে জানান সাখাওয়াত উল্লাহ।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আগামীকাল বুধবার বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের জরুরি সংবাদ সম্মেলন করা হবে। সেখানে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে জানান ট্যানারি মালিকদের এ নেতা।
এবার কোরবানির পশুর চামড়া গত ৩০ বছরে সর্বনিম্ন দরে বিক্রি হয়েছে। দাম কমে যাওয়ায় অনেক চামড়া পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এ নিয়ে পোস্তার আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা পাল্টাপান্টি অভযোগ করেন। পোস্তার আড়তদাররা বলেন, ৯০ ভাগ ট্যানারির মালিক পোস্তার পাওনা টাকা পরিশোধ করেনি। তাই নগদ টাকার সংকটে চামড়া কিনতে পারছেন না।
অন্যদিকে ট্যানারির মালিকরা বলছেন, ঢালাওভাবে অভিযোগ করা ঠিক নয়। কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ ট্যানারি পাওনা অর্থ পরিশোধ করেছে।
আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে লোকসানে পড়েন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। বঞ্চিত হচ্ছে গরিব, এতিমরা। এছাড়া অনেক কোরবানিদাতা ক্ষুব্ধ হয়ে চামড়া মাটিতে পুতে ফেলছেন। এমন পরিস্থিতিতে কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।