ভারতের আসামের প্রায় ৪০ লাখ কথিত অবৈধ অভিবাসীর জন্য দিল্লি বিশাল বন্দিশালা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।
এ তথ্য মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে জানানো হয়েছে। নাগরিক পঞ্জিতে বাদ পড়া অবৈধ চিহ্নিত মুসলমানরা কেন্দ্রীয় সরকারের এ পরিকল্পনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।
চলতি মাসের শেষে ভারতের আসাম রাজ্যে চূড়ান্ত নাগরিক নিবন্ধন তালিকা (এনআরসি) প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।
‘দ্য ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস বা এনআরসি’ নামে পরিচিত এই তালিকাটি ১৯১৫ সালে তৈরি করা হয়। এর উদ্দেশ্যে ছিল কারা জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক এবং কারা প্রতিবেশী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে এসেছে।
প্রথমবারের মতো ওই তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার আগে থেকেই নিজেদের আসামের বাসিন্দা প্রমাণ করতে পারে তাদেরকে ভারতের নাগরিক হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। ভারতের সরকারের দাবি, রাজ্যে অবৈধ অভিবাসী শনাক্ত করতে এই তালিকা জরুরি।
গত জুলাইতে সরকার চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তাব প্রকাশ করে যা অনুযায়ী আসামে বসবাসরত প্রায় ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়ে, যাদের প্রায় সবাই মুসলমান বাঙালি।
অনেক নাগরিক ভারতে জন্মগ্রহণ ও ভোটাধিকার সুবিধা ভোগ করছেন। পাশাপাশি অন্যান্য নাগরিক সুবিধাও ভোগ করছেন। কিন্তু বর্তমানে তাদের আদি পরিচয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
জুনে এক ঘোষণায় কর্তৃপক্ষ জানায়, গত বছরের এনআরসি তালিকাসহ আরও প্রায় এক লাখ বাসিন্দার নাম তালিকা থেকে বাদ পড়বে। তাদের আবারও নিজেদেরকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে হবে।
চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এ কারণেই বন্দিশালা তৈরির পরিকল্পনা করছে ভারত সরকার।
আসামের নাগরিকদের রেজিস্ট্রেশন কর্মসূচির কারণে ১৯৮০’র দশক থেকেই বেশ কিছু ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়। তারা নিয়মিতভাবেই বিদেশিদের ‘সন্দেহজনক ভোটার’ এবং ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে শনাক্ত করে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে। বর্তমানে সেসব ট্রাইব্যুনাল সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ভারতের দরিদ্র ও পাহাড়ি রাজ্য আসামে অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় এরই মধ্যে কিছুটা শুরু হয়ে গেছে। এদের মধ্যে ভারতের সেনাবাহিনীতে কাজ করা কারগিল যুদ্ধের এক মুসলিম সেনাও রয়েছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদি সরকার ভারতীয় বলতে নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করার চেষ্টা করছে। এ কারণে সরকার কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদকে সামনে আনছে।
তাছাড়া, মোদি বিপজ্জনক খেলা খেলছে। এ কারণে দেশটির হাজার বছরের ধর্মীয় বহুত্ববাদের চেতনা নষ্ট হতে পারে।
মুসলমান ধর্মাবলম্বী বাদে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের রক্ষায় সংসদে একটি বিল আনার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন সরকার।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে হালনাগাদ তালিকার প্রথম খসড়া প্রকাশিত হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ‘সিটিজেন ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস’ সংস্থার সংগঠক জমশের আলি তালিকার প্রকাশের পর ৫১টি আত্মহত্যার তালিকা দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, নাগরিকত্ব হারানোর ভয় থেকে মানসিক আঘাত ও চাপের মধ্যে ছিলেন এসব মানুষ।
গত ৫ আগস্ট ভারতের সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল করা হয়। ফলে জম্মু-কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’ স্থগিত হয়ে যায়। কাশ্মীরে জনমিতিক সংখ্যায় পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে ধারাটি বাতিল করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে ভারতে বসবাসরত মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা আরও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।