রাসেল ডমিঙ্গো নিজেকে খেলোয়াড়দের বন্ধু মনে করেন। বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ হিসেবেও ডমিঙ্গো থাকবেন খেলোয়াড়দের পাশে।
কখনো বোর্ডের সঙ্গে কোচের বিবাদ, কখনো ক্রিকেটারদের সঙ্গে কোচের মনোমালিন্য। বাংলাদেশ দলের বিদেশি কোচদের নিয়ে একসময় না একসময় এই ঝামেলাগুলো হয়ই। পরিণতিও যা হওয়ার, তা-ই হয়। বাংলাদেশ থেকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় নেওয়া বিদেশি কোচের সংখ্যা তাই কমই আছে। সর্বশেষ উদাহরণ স্টিভ রোডস। রোডসের সঙ্গে বিসিবির চুক্তি ছিল ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত।
কিন্তু বিশ্বকাপ-ব্যর্থতার দায় নিয়ে চুক্তির এক বছরের মাথায় বিদায় নিয়েছেন এই ব্রিটিশ কোচ। নতুন কোচের দায়িত্বভার তুলে দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার রাসেল ডমিঙ্গোর কাঁধে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে অজুহাত দেখিয়ে রোডসকে বাদ দিয়েছে বিসিবি, সেই একই মানসিকতার কোচ কিন্তু এই ডমিঙ্গোও।
রোডসের নীতি ছিল ক্রিকেটারদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া। তরুণ ক্রিকেটারদের নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নিতে উৎসাহ দিতেন তিনি। ড্রেসিংরুমে অযথা চাপ সৃষ্টি না করে ক্রিকেটারদের কাছ থেকে সেরা পারফরম্যান্স বের করে আনাটাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য। কাল মুঠোফোনে কথা বলে ব্যতিক্রম মনে হয়নি ডমিঙ্গোকেও। দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ জানিয়েছেন, ক্রিকেটারদের প্রাধান্য দিয়েই বাংলাদেশ দলে কাজ করবেন তিনি।
ডমিঙ্গোর কাছে ক্রিকেটাররা আগে, এরপর বাকি সব। ডমিঙ্গো দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বলছিলেন, আমি খেলোয়াড়দের স্বার্থ বড় করে দেখব। তাদের সঙ্গে কাজ করাটা সব সময় উপভোগ করি। খেলোয়াড়েরাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে। তাদের কাছ থেকে আমার সেরাটা বের করে আনতে হবে, তাদের সাহায্য করতে হবে। তাদের যতটা বেশি তথ্য দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা করব। খেলোয়াড়েরা ছাড়া আমরা সবাই মূল্যহীন। তারাই আমার কাছে প্রাধান্য পাবে।
বাংলাদেশে প্রধান কোচের দায়িত্বটা ক্রিকেটেই সীমাবদ্ধ থাকে না। খেলোয়াড় আর বোর্ড কর্তাদের মন বুঝে চলতে কূটনৈতিক দক্ষতাও থাকতে হয় তার। চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কথাই ধরুন। ক্রিকেটারদের অনেকের সঙ্গেই সম্পর্ক সহজ ছিল না এই শ্রীলঙ্কান কোচের। তারপরও বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার তিন বছরের ওপর কাটিয়ে যাওয়ার একটা কারণ কিছু বোর্ড কর্মকর্তার সঙ্গে সুসম্পর্ক।
বোর্ড ও খেলোয়াড়দের সঙ্গে রসায়নটা মেলেনি বলেই ২০১১ বিশ্বকাপের পর থেকে এ নিয়ে পাঁচবার কোচ বদল করল বাংলাদেশ। তবে নতুন দায়িত্ব নিতে গিয়ে এসব নেতিবাচক দিক মাথায় আনছেন না ডমিঙ্গো, আমি খুব বেশি ভাবিনি এসব নিয়ে। আমি দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটে কাজ করেছি, সেখানেও অনেক কোচ এসেছে ও গেছে। এটা সব দেশেই হয়। দল ভালো না করলে কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতেই হয়। এটা নতুন কিছু না।
তার দর্শনটাও তাই একটু ভিন্ন, প্রধান কোচ হিসেবে আপনার মনোযোগ দেওয়া উচিত সেসব জিনিসে, যা আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এসব কোচিংয়ের অংশ। গত চার-পাঁচ বছরে সব দলই প্রধান কোচের পদে রদবদল করছে। এভাবেই চলছে, চলবে। এখানে কিছু করার নেই আসলে।
দক্ষিণ আফ্রিকা দলের প্রধান কোচ ছিলেন। বড় ক্রিকেটারদের সামলানোটা তাই ডমিঙ্গোর কাছে নতুন কিছু নয়। গ্রায়েম স্মিথ, জ্যাক ক্যালিস, এবি ডি ভিলিয়ার্স, হাশিম আমলার সঙ্গে ছিলেন ডেল স্টেইন, মরনে মরকেলের মতো তারকা ক্রিকেটার। সবাইকে একই ছাতার নিচে রেখেই তাদের সেরাটা বের করে আনতে চেষ্টা করেছেন মাত্র ২২ বছর বয়সে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করা ডমিঙ্গো।
বাংলাদেশেও তিনি কাজ করবেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহর মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সঙ্গে। সিনিয়রদের সঙ্গে কোচের সহজ সম্পর্ক দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটিও অজানা নয় ডমিঙ্গোর, বাংলাদেশ দলে বেশ কয়েকজন বড় মাপের ক্রিকেটার আছে। তবে সবাই কিন্তু দিন শেষে মানুষ। আমিও মানুষ। আমাদের নিজেদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সবাই যেন একই পথে হাঁটে, সেটা দেখতে হবে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি। সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা কোচিংয়ের বড় অংশ।
মাশরাফি বিন মুর্তজার ক্যারিয়ার প্রায় শেষ প্রান্তে। অন্য সিনিয়র ক্রিকেটারদের জন্যও আগামী কয়েকটি বছর হবে গুরুত্বপূর্ণ। আর বিসিবিও এখন থেকেই ভবিষ্যৎ-মুখী চিন্তা করতে শুরু করেছে। তুলে আনতে চায় দায়িত্ব নেওয়ার মতো নতুন ক্রিকেটার। নতুন দায়িত্বে ডমিঙ্গোও গুরুত্ব দেবেন সেদিকে, আমি কিছু তরুণ ক্রিকেটারকে দেখতে চাইব। খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকা ভালো। ওদের কাজের চাপের ব্যবস্থাপনা করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে সামনের বছরগুলোতে।
স্বপ্ন নিয়েই বাংলাদেশে আসছেন প্রথম কোনো বিদেশি দলের দায়িত্ব নেওয়া ডমিঙ্গো। কিন্তু স্বপ্নপূরণের চ্যালেঞ্জগুলো সামলাতে পারবেন তো?