‘আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি’ নিয়ে আসছে সেনাবাহিনী

ডেস্ক রিপোর্ট

আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি

সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য আধা-সামরিক বাহিনীর আহত ও নিহত সদস্যদের এবং তাদের পরিবারের কল্যাণ, পুনর্বাসন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি’ নামে আরও একটি জীবন বীমা কোম্পানির অনুমোদন দিচ্ছে সরকার।

আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, আনসার ও র‌্যাব সদস্যরা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিটি থেকে বীমা সহায়তা পাবেন। চলতি বছরের ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী এ বীমা কোম্পানি গঠনের জন্য নীতিগত অনুমোদন দেন।

নীতিগত অনুমোদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সামরিক সদস্য নানা ধরনের অভিযানিক/অনাভিযানিক কার্যক্রমে অংশ নিতে যেয়ে গুরুতর আহত, এমনকি মৃত্যবরণও করে থাকেন। এদের অনেকেই পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জনের পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেন অথবা আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন।

‘সাম্প্রতিক সময়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলমান জাতিসংঘের মিশনসমূহের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কর্তব্যরত অবস্থায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মৃত্যুবরণ করেন অথবা গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এতদসত্ত্বেও নানাবিধ কারণে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিশেষ করে অনাভিযানিক দুর্ঘটনা (সড়ক দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ডে আক্রান্ত, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া প্রভৃতি) অথবা গুরুতর রোগে আক্রান্তজনিত কারণে মৃত্যুবরণকারী ও অহত সংশ্লিষ্ট সামরিক ও অসামরিক সদস্যদের অনুকূলে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হচ্ছে না।”

এতে আরও বলা হয়, বৈদেশিক কর্তব্যে দেশের বাইরে নিয়োজিত থাকাকালীন উপরোক্ত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি প্রচলতি অন্যান্য লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি কর্তৃক সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল/এলাকা হওয়ার কারণে ইতিবাচকভাবে বিবেচিত না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সামরিক ও পুলিশ সদস্যরা এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বীমা সহায়তা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ সমস্যা নিরসনে বাহিনীগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সামরিক সদস্য এবং তাদের পরিবারের কল্যাণে নিজস্ব উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকাংশেই অপ্রতুল।

“অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত সংশ্লিষ্ট সামরিক সদস্যের মৃত্যুজনিত অনুপস্থিতি অথবা স্থায়ী পঙ্গুত্বের কারণে তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে। এ অবস্থা নিরসনে আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ‘আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’ গঠনের অনুরোধ জানিয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট একটি আবেদন করে।”

“এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, ব্যাংক ও আর্থিকপ্রতিষ্ঠান বিভাগের মতামত চাওয়া হলে অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ইন্সুরেন্স কোম্পানি গঠনের অনুকূলে মতামত দেয়। তারপরও আইডিআরএ থেকে ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর প্রস্তাবিত ‘আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’- এর নিবন্ধন সনদ প্রদানের আবেদন আপাতত বিবেচনা করা সম্ভব নয় মর্মে জানায়। এমতাবস্থায় সেনাসদর কর্তৃক দীর্ঘ সময়ব্যাপী অনিষ্পন্ন বিষয়যুক্ত ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গঠনের অনুকূলে প্রয়োজনীয় সহায়তা কামনা করে অত্র বিভাগে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ) একটি অনুরোধপত্র পাঠানো হয়” বলে সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জনা গেছে, ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল সেনা কল্যাণ সংস্থার তত্ত্বাবধানে ‘সেনা কল্যাণ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’ নামে জীবন বীমা কোম্পানি নিবন্ধনের আবেদন করা হয়। তবে আইনি চাহিদা পূরণ না হওয়ার কারণ দেখিয়ে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর আইডিআরএ আবেদনটি খারিজ করে দেয়।

এরপর ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি সেনা কল্যাণ সংস্থা থেকে নিবন্ধনের বিষয়টি পুনঃবিবেচনার জন্য আইডিআরএ’র কাছে আপিল করা হয়। একই সঙ্গে আইনি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ১৮ জুন সেনা কল্যাণ সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জীবন বীমা কোম্পানি স্থাপন করার দায়িত্ব আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টকে হস্তান্তর করা হয়।

ওই সিদ্ধান্তের পর একই বছরের ২৩ জুন আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সভায় জীবন বীমা কোম্পানির নাম ‘সেনা কল্যাণ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’ এর পরিবর্তে ‘আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’ করা হয়। সেই সঙ্গে আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড গঠনের সকল প্রক্রিয়া সেনা কল্যাণ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’র পরিবর্তে আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড নামে প্রতিস্থাপিত হয়।

পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আইডিআরএ’র কাছে আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড নামে নতুন বীমা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন সনদ দেয়ার বিষয়ে আইন ও বিধি মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ১৫ অক্টোবর আইডিআরএ থেকে জানানো হয় যে, ‘প্রস্তাবিত আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে নিবন্ধন সনদ প্রদানের জন্য আবেদন আপাতত বিবেচনা করা সম্ভব হলো না।’

এ পরিস্থিতিতে আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি স্থাপনের যাবতীয় আইনি চাহিদা পূরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় এবং ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর আইডিআরএ’র কাছে পুনঃবিবেচনার জন্য বিলম্বের বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখা দেয়া হয়। এরপর চলতি বছর প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন পাওয়ার পর আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট থেকে আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নিবন্ধনের বিষয়টি গত ৩০ জুলাই আবার আইডিআরএ’র কাছে উপস্থাপন করা হয়।

এরপর বিলম্বের বিষয়টি মার্জনা করে আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টকে চলতি বছরের ৭ আগস্ট শুনানিতে ডাকে আইডিআরএ। ওই শুনানির মাধ্যমে আইডিআরএ’র ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবরের আদেশ রহিত করে রিভিউ গ্রহণ করা হয়। সেই সঙ্গে আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টকে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করার সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ।

এ বিষয়ে আইডিআরএ’র সদস্য ড. এম মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’ অনুমোদনের বিষয়ে এখন আইনগত কোনো বাধা নেই। এখন পর্যন্ত সকল আইনিপ্রক্রিয়া সঠিক আছে। এখন আইনিপ্রক্রিয়া মেনে আবেদন করলে আমরা অনুমোদন দিয়ে দেব।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই ওরা (সেনাবাহিনীর আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স) আসুক। সত্যিকার অর্থে, সেনাবাহিনী খুবই সুশৃঙ্খল। বীমা খাতে কিছুটা যে অনৈতিক প্র্যাকটিস আছে, ওরা আসলে তা করবে না।

আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফারুক বলেন, জীবন বীমা কোম্পানিগুলো যে সেবা দিচ্ছে আমরা তার পাশাপাশি আরও একটু বাড়তি সেবা দেব। যেমন- যুদ্ধক্ষেত্রে আমরা বীমার সুবিধা দেব।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে