নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে বিএনপির একগুচ্ছ পরিকল্পনা

বিশেষ প্রতিবেদক

বিএনপি
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সামনে রেখে নেতাকর্মীদের দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় করতে চাইছে দলের হাইকমান্ড। আর এ লক্ষ্যে তৃণমূলসহ কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিভাগের পর বড় জেলাগুলোতে সমাবেশ করা হবে। রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি ডেঙ্গু সচেতনতা, বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোসহ সামাজিক কর্মকাণ্ডে নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করার মধ্য দিয়ে তাদের উজ্জীবিত করা হবে।

universel cardiac hospital

সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে দীর্ঘদিন যেসব এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই সেসব জায়গায় নেতৃত্ব পরিবর্তন করা হবে। দলীয় কর্মকাণ্ডে গতি আনতে যোগ্য, ত্যাগী নেতাদের শীর্ষ নেতৃত্বে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

একইসঙ্গে বিগত আন্দোলনে মামলা-হামলাসহ নানা কারণে যেসব নেতাকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সরাসরি সহযোগিতা করা হবে। তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। নিহতের পাশাপাশি আহত ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় নেতারা সারা দেশ সফর করবেন। সব মিলিয়ে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার লক্ষ্যেই সার্বিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি হাইকমান্ড।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। স্বৈরাচার সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমনে নির্যাতন চালিয়ে আসছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ বিগত সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে আমরা কাজ করছি। এ লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে নেতাকর্মীরা আবারও উজ্জীবিত হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে আশা করি।

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক গণমাধ্যমকে জানান, এই মুহূর্তে সরকারবিরোধী বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি নেই। ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের হতাশা দূর করাই মূল টার্গেট। চেয়ারপারসনের কারামুক্তির অংশ হিসেবে বিভাগীয় শহরে সমাবেশ হলেও এর মূল উদ্দেশ্য নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় করা। ঈদের আগে তিন বিভাগে সমাবেশের মাধ্যমে তার প্রমাণ মিলেছে। তাই বাকি বিভাগগুলোতে দ্রুত সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সেপ্টেম্বরের মধ্যেই চেষ্টা করব এসব সমাবেশ শেষ করার। শুধু বিভাগ নয়, পুরনো যেসব বড় জেলা রয়েছে সেখানেও আমরা সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা করছি।

আগামী ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নানা আয়োজনে তা পালন করা হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের মূল লক্ষ্য নেতাকর্মীদের সক্রিয় করা। এর অংশ হিসেবে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

এসব র‌্যালিতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং কারামুক্তির বিলম্ব নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ভর করেছে। এমন পরিস্থিতিতে এ ইস্যুতে নেতাকর্মীদের হতাশা দূর করতে কার্যকর এবং সময়োপযোগী উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

চেয়ারপারসনের মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য শুধু আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আন্তর্জাতিক সহায়তা নেয়া হবে। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে শিগগিরই কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করবে।

প্রভাবশালী দেশ ভারত, চীন এমনকি সৌদি আরব সফরের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চেয়ারপারসনের মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য এসব দেশ সরকারের ওপর যাতে চাপ প্রয়োগ করে সে লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ। এসব উদ্যোগ ফলপ্রসূ হলে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু গণমাধ্যমকে বলেন, একটা দল দীর্ঘদিন জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে আছে। নানা নির্যাতন, হামলা-মামলার কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও হতাশা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সাহস আনতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ভোটের মাধ্যমে তৃণমূলে নেতৃত্ব পরিবর্তন করা হবে।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড না থাকায় বেশিরভাগ জেলা-উপজেলায় দলটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নেই। যেসব ইউনিটে দীর্ঘদিন কমিটি পুনর্গঠন হচ্ছে না সেগুলো দ্রুত পুনর্গঠন করা হবে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগীদের শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হবে।

যাতে দল নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। শুধু মূল দল নয়, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গসংগঠনগুলোও পুনর্গঠন করা হবে। সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তাদের প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত করা হবে। ডেঙ্গু সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করা হবে।

এ লক্ষ্যে দলীয়ভাবে পোস্টার ও লিফলেট তৈরি করা হয়েছে। এসব লিফলেট নিয়ে শিগগিরই সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় যাবেন নেতাকর্মীরা।

পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকায় নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত একটি টিম বন্যার্তদের ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় ও তাদের সহায়তায় কাজ করছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের এ কাজে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে